নরসিংদী জেলায় বিভিন্ন মহলায় ভাঙ্গারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চলছে চোরাই মালের জমজমাট বাণিজ্য। এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর। এসব ব্যবসার উপর নজরদারি নেই প্রশাসনের। অবৈধভাবে রাতের আঁধারে অটোরিকশা ছিনতাই, প্রাইভেটকার, বাড়ির পাশে থাকা পানির কলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি হয়। একটু সন্ধা হলেই ভাঙ্গারির দোকানগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত গ্যাস দিয়ে কেটে টুকরা টুকরা করে অন্যসব সরঞ্জামের সাতে মিশিয়ে রাখা হয় এসব।
ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ চোরাই লোহাজাত দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে ভাঙ্গারি দোকানগুলোতে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহর থেকে শুরু করে প্রত্যেক উপজেলায় গড়ে উঠেছে শত শত ভাঙ্গারি মালামাল কেনা-বেচার দোকান। এইসব দোকানির সহযোগিতায় এলাকা ভিত্তিক গড়ে উঠেছে একাধিক চোরের দল।এই চোরের দলগুলো বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্যালো যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক মোটর, তার, বৈদ্যুতিক ট্রান্স মিটার, দরজা-জানলার গ্রীল, টিউবওয়েল, টিন, অটোরিকশা, প্রাইভেটকারসহ যানবাহনের যন্ত্রাংশ চুরি করে দোকানিদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে।জানা যায়, একটা না একটা অংশ চুরি হওয়ার কারণে প্রায় হাজারো নলকূপ বিভিন্ন এলাকায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন কারখানা সংস্কার কাজের জন্য রাখা রড, তারসহ লোহা দ্রব্যাদি ও চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকজন বাড়ির মালিকের সাথে আলাপে জানা গেছে, কিছু মাদকসেবক বাড়ি থেকে যখন নেশার টাকা যোগাড় করতে না পারে, তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে লোহা চুরি করে। আর চুরি করা মালামাল ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা শাহিনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, হাসনাবাদ বাজারের দক্ষিণে একটি ভাঙ্গারির দোকান রয়েছে। রাত একটু গভীর হলেই এসব ভাঙ্গারির দোকানে চলে কাটকাটি। অসংখ্য চোরা কারবারীদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এই দোকানের মালিকদের।শিবপুর উপজেলার দুলালপুর এলাকার বাসিন্দা প্রাইভেটকার চালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, কিছুদিন আগে চোরের দল তার গাড়ি থেকে ব্যাটারিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যায়।
পরে তা ইটাখোলা বাস স্ট্যান্ডের এক ভাঙ্গারি দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়। অন্য এক গাড়ির মালিক জানান, তার গাড়িটি মেরামতের জন্য বাস স্ট্যান্ডে রাখা অবস্থায় অতিরিক্ত চাকা ও কিছু যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসনাবাদ এলাকার এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী বলেন, চুরির মাল ছাড়া প্রকৃত ভাঙ্গারি ব্যবসা করা খুবই কঠিন। আর সকলকেই ম্যানেজ করেই চলে এই ভাঙ্গারি ব্যবসা। তিনি আরও জানান, একেকজন ব্যবসায়ীর ৫-৬ জন ফেরি ব্যবসায়ী থাকেন। তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কিছু নিত্যপণ্যের বিনিময়ে ব্যবহার অনুপযোগী কিংবা পরিত্যক্ত জিনিষপত্র সংগ্রহ করে আমাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এ দিকে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিনিয়ত এই জেলার ফুটপাতে ও মহাসড়কে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে ভাঙ্গারি ব্যবসা। যার কারণে বাড়ছে চুরির সংখ্যা। তাই এসব দোকানে প্রশাসনের দ্রুত নজরদারী আনা উচিত বলে মনে করেন তারা।
এখানে কমেন্ট করুন: