মো: শফিকুল ইসলাম :
অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে নরসিংদী সদর হাসপাতাল। নানা সংকটের কারণে ব্যাহতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা । তার উপর হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট, জরুরি বিভাগে ঔষধ সংকট রয়েছে।

অত্যাধুনিক মেশিনপত্র থাকলেও স্থান সংকুলনের অভাবে প্যাকেটবন্ধি হয়ে বছরের পর বছর হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থাকতে হচ্ছে। রিজেন্টের অভাবে অধিকাংশ পরীক্ষা নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদেশী সংস্থা জাইকা’র দেয়া ইনভেস্টিকেশন এনালাইজার মেশিন (রক্ত পরীক্ষার উন্নতমানের মেশিন) ও সরকারী ভাবে বরাদ্ধ দেয়া ডিজিটাল এক্সরে মেশিন রোগীদের কোন কাজে আসছে না। এছাড়া জরুরী বিভাগে রোগীদের ফাস্টটিট্র সার্ভিস দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সুই সুতা ইনজেকশন সহ গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ পত্র কিছুই নেই। ইসিজি মেশিন এস্যানশিয়াল হলেও হাসপাতালে জরুরী বিভাগের তা নেই। ফলে হরহামেশাই মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এসব সমস্যার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছে সেবা নিতে আসা রোগীরা, পাশাপাশি বিপাকে আছেন চিকিৎসকরা।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ১৯৬২ সালে গড়ে তোলা হয়েছে নরসিংদী সদর হাসপাতাল। জরুরী বিভাগ ও বর্হি বিভাগ থেকে গড়ে প্রতিদিন রোগী তিন হাজার রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। রোগী সেবা বৃদ্ধি করতে ৩১ শয্যার এই হাসপাতালটিকে পর্যায় ক্রমে ১শত শয্যায় উন্নিত করা হয়। হাসপাতালটিকে ১শত শয্যায় উন্নিত করা হলেও বাড়েনি বাড়তি সেবা। গত ১০ বছর যাবৎ ৩১ শয্যার জনবল, পুরানো স্থাপনা ও পুরানো যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালটিতে দীর্ঘ দিন ইএনটি কন্সালটেন্ট,ডেন্টাল সার্জন,আই কন্সালটেন্ট,রেডিওলজিষ্ট পোষ্ট ফাঁকা রয়েছে। ফলে বন্ধ রয়েছে আল্টাসোনগ্রাফী। পরীক্ষার নিরীক্ষার রিজেন্ট (ক্যামিক্যল) সরবরাহ না থাকায় বন্ধ রয়েছে নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা। তাই রোগীর চাপ সামলাতে প্রতিনিয়তই হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎকদের। হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ড ও গাইনি ওয়ার্ডের অবস্থা চরম নাজুক। গাইনি ওয়ার্ডের দেয়ালে দেখা দিয়েছে বড় ফাটল। খসে পড়ছে ছাদ ও দেয়ালের পলেস্থা। সাময়িক ভাবে এসবের মেরামত করে ডেকে দিলেও হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। হাসপাতালটিতে জেনারেটর থাকলেও তেল সরবরাহ অভাবে বছরের পর বছর অচল হয়ে আছে। তাই বিদুৎ চলে গেলে মোম বাতি দিয়ে কাজ চালাতে হয়। এম্বুলেন্স থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ তা বিকল হয়ে আছে। তার উপর দালালদের দৌরাত্ব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জরুরী বিভাগে দায়িত্বে থাকা এক নার্স বলেন,জরুরী বিভাগে প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র,ব্যাথা নাশক ইনজেক্শন এমনকি সেলাইয়ের সুতা ও সিরিজটাও নেই। ইসিজির মেশিন নেই। শুধু নেই আর নেই। এর মধ্যেই চলছে জরুরী বিভাগের সেবা। যার ফলে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ায় বিঘ্নতা ঘটছে। জরুরী বিভাগের ইনচার্জ মোঃ লুৎফুর রহমান বলেন, দালাল নির্মূল হলে হাসপাতাল ঠিক হয়ে যাবে। তাদের অত্যাচারে রোগীদের চিকিৎসা করা যায় না। তারা রোগী বাগিয়ে নিয়ে যায়। রোগীদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করলে, তারা নিয়ে যায় প্রাইভেট ক্লিনিকে। সেখানে নিয়ে মোটা টাকা আদায় করে।

ফলে সার্টিফিকেট দেয়ার সময় বিপত্বি দেখা দেয়। স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের কনন্সালটেন্ট ডা: অসিম কুমার সাহা বলেন, রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালে ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মোমবাতি দিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। প্রতিটা জনগুরুত্বপূর্ন স্থাপনায় বিদ্যুতের দুইটি লাইন থাকে। একটিতে বিদ্যুৎ চলে গেলে অপটি দিয়ে বিদুৎ সরবরাহ হয়। কিন্তু সদর হাসপাতালে এই সুবিধা নেই। যার ফলে রাত-বি-রাতে হরহামেশাই গুরুত্বপূর্ন অপারেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাঝে মধ্যে ওটি টেবিলেই রোগীর অবস্থার অবনতি হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন,হাসপাতালের পক্ষ থেকে স্থানীয় বিদুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে। তারা টাকা চায়। এখন সরকারী হাসপাতাল টাকা দিবে কোথা থেকে? সদর হাসপাতালের আবাসিক কর্মাকর্তা (আরএমও) সৈয়দ আমিরুল হক শামিম বলেন, ৩১ শয্যার জনবল ও পুরানো স্থাপনা দিয়েই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। চিকিৎসার মান ঠিক রাখতে আমরা প্রেষনে চিকিৎসকদের এনে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছি। উপযোগী রুম না থাকায় এক্সরে মেশিন স্থাপন করা যাচ্ছেনা। সরকার রিএজেন্ট (ক্যামিকেল) সরবরাহ করলে আরো নতুন ৩৬টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব হবে।

এখানে কমেন্ট করুন: