নরসিংদী জেলার মনোহরদী ৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও টেকনিশিয়ান থাকা সত্বেও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় সরকারী হাসপাতালের গেটের পাশে হাসপাতালে। এটি মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিত্য দিনের ঘটনা।
আর এই অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন এই হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোনামিন জেমী। রোগীদের সাথে দূর্ব্যবহার, অফিস সময়ে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখা, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসক মোনামিন জেমী দীর্ঘদিন ধরে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গড়ে উঠা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার গুলোর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। বিশেষ করে লাইফ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে তিনি অনেকটা চুক্তিবদ্ধ হয়ে যান। সরকারী হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তার কাছে গেলেই দরজার সামনে দাঁড়ানো থাকা দালালের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় লাইফ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে। এভাবে সাত-আটজন রোগী ওই প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে লাইনে দাঁড়ানো অন্যান্য রোগী রেখেই বেরিয়ে যান তার টাকার চেয়ারে। সেখানে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে গলাকাটা শুরু করেন নিরীহ রোগীদের। তার নির্ধারিত প্রাইভেট হাসপাতালে পরীক্ষা না করালে রোগীদের সাথে দূর্ব্যবহার শুরু করেন। অনেক সময় রাগান্বিত হয়ে ব্যবস্থাপত্র ছুঁড়ে ফেলার ঘটনাও তিনি ঘটিয়েছেন।
ভূক্তভোগীরা জানান, ডাক্তার মোনামিন জেমীর বাড়ি একই উপজেলায় হওয়ায় সরকারী নিয়ম-নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাচ্ছেন। তার এসব অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সতর্ক করলেও তিনি এসবের তোয়াক্কাই করছেননা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেন তার কাছে পুরোই অসহায়।
উপজেলার হাফিজপুর গ্রামের ভূক্তভোগী রিমা বেগম বলেন, গত ১৯ জুন আমার মায়ের পেট ব্যথা শুরু হলে সকাল সাড়ে ১০ টায় মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে ১০১ নম্বর কক্ষে ডাক্তার মোনামিন জেমীর কাছে যাই। ডাক্তার আমার মাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই একটি পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়ে দালালের মাধ্যমে হাসপাতালের উত্তর পাশে লাইফ কেয়ার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে যাওয়ার ২০ মিনিট পর ডাক্তার এসে মায়ের আল্টাসনোগ্রাম করেন। আল্টাসনোগ্রামের পর ডাক্তারের নিজস্ব পেডে ব্যবস্থাপত্র করেন। পরে পরীক্ষা বাবদ পাঁচশ টাকা এবং ডাক্তার ফি আরো পাঁচশ টাকা নেয়া হয়। চারদিন পরও মায়ের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২৩ জুন সকাল ১১ টায় আবারো মাকে নিয়ে জরুরী বিভাগে ডাক্তার মোনামিন জেমীর কাছে আসি। সেদিনও একই কায়দায় প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য ওই প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। যদিও এসব পরীক্ষা সরকারী হাসপাতালেই করা হয়। প্রস্রাব পরীক্ষার পর কাগজপত্র ও মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে পুনরায় জরুরী বিভাগে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং আমাদেরকে ওই প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে বলেন। আমার কাছে টাকা না থাকায় এখানেই মাকে দেখার অনুরোধ করলে তিনি কোন প্রকার কারণ ছাড়াই আমাকে গালমন্দ করতে থাকেন। পরে নিরুপায় হয়ে মাকে অন্য ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ী ফিরতে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক স্টাফ বলেন, কিছুদিন আগে আমার বোনকে নিয়ে জেমী ম্যাডামের কাছে আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলেন। এ সময় আমি হাসপাতাল থেকে পরীক্ষার কথা বললে তিনি আমার সাথেও বাজে আচরণ করেন।
এছাড়াও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে রোগীদেরকে বিনামূল্যে ঔষধ স্যালাইন না দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে হাসপাতালে আসা বহু রোগীর কাছ থেকে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মোনামিন জেমী বলেন, আমি কারো সাথে কখনো খারাপ আচরণ করিনি। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে লাইফ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল মাঝে মাঝে আমার পেড ব্যবহার করে।
মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হাসান মাহমুদ বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।