মো: শফিকুল ইসলাম : নরসিংদীর শিবপুরে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধ’র্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়েনের জয়মঙ্গল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

পরে অভিযুক্ত ধ’র্ষকদের বাঁ’চাতে দেড়লাখ টাকায় ঘটনাটি আপোষের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই জনপ্রতিনিধি এক সপ্তাহ ধরে নি’র্যাতিতা ওই কিশোরীর পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োাগ করেছেন। পরে র‌্যা’ব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের হস্তক্ষেপে কিশোরীর ইজিবাইক চালক বাবা শুক্রবার (২ আগস্ট) রাত ১০টায় পাঁচজনকে আসামী করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন।

মামলার পাঁচ আসামী হলো- শিবপুরের বাঘাব ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামের মো. সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মো. জাকির হোসেন (৪৫) ও মো. আক্তারুজ্জামানের ছেলে মো. কাজল মিয়া (৫৫) এবং বিরাজনগর গ্রামের মোতালেব মিয়ার ছেলে মো. হযরত আলী (৪৫), মো. রাজু মিয়ার ছেলে মো. সেলিম মিয়া (৩৫) ও মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. মনির হোসেন (৩৫)। নির্যাতিত কিশোরী বাঘাব ইউনিয়নের বিরাজনগর এলাকার বাসিন্দা।

মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন রাতে গান শুনতে সৃষ্টিগড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান তিনি। রাত তিনটার দিকে তার ছোটভাই ফোন করে জানায়, তার কিশোরী মেয়েকে নাকি মেরে ফেলা হচ্ছে। তার ছোটভাইকে এই ঘটনাটি ফোনে জানান আসামী কাজল। রাত সাড়ে ৪টার দিকে পরিবারের লোকজনকে সাথে নিয়ে তিনি জয়মঙ্গল গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান তার মেয়েকে বিবস্ত্র, রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় রান্নাঘরে ফেলে রাখা হয়েছে।

এ সময় সে বাড়িতে কেউ ছিল না। অসুস্থ অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর সুস্থ্য হয়ে সে জানায়, রাত ১১টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে বের হয়েছিল মেয়েটি। এসময় ওত পেতে থাকা জাকির, হযরত ও কাজল মিলে তার মুখ চেপে ধরে তুলে জয়মঙ্গল গ্রামের কাজল মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়।

সেখানে পাঁচজন মিলে জোরপূর্বক মুখ চেপে ধরে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। রাত তিনটায় সবাই মিলে তাকে অচেতন অবস্থায় একই গ্রামের জাকিরের বাড়ির রান্নাঘরে এনে ফেলে রেখে সবাই এই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। মামলার বাদী ও নি’র্যাতিত ওই মেয়ের বাবা জানান, লোকলজ্জার ভয়ে ও মেয়র ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঘটনাটি গোপন রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লোক জানাজানি হয়ে যাওয়ায় কোন কিছু ভেবে না পেয়ে ঘটনার দুইদিন পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ঘটনা খুলে বলি।

ইউপি চেয়ারম্যান তরুণ মৃধা আমাকে তখন বলেন, খুব দেরি হয়ে গেছে, এখন তো আর থানায় মামলাও নেবে না। আমিই বিষয়টি মিমাংশা করে দেব। পরে ৩১ জুলাই তারিখে চেয়ারম্যান জানান, তিনি আর মিমাংশা করতে পারবেন না। থানায় বা কোর্টে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঘাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তরুণ মৃধা এই ঘটনাটি দেড় লাখ টাকায় মিমাংশা করতে চেয়েছিলেন। এর জন্য বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ টাকাও তিনি তুলেছেন।

অতিরিক্ত সময়ক্ষেপন করে আসামীদের বাঁ’চিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে পুলিশ ঘটনাটি জেনে আসামীদের বাড়িতে তল্লাশী চালায়। অথচ তখনও ভুক্তভোগী পরিবারটিকে থানায় এসে মামলা করাতে উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ। গত সোমবার (২৯ জুলাই) পুলিশ তল্লাশী চালানোর সময় অভিযুক্ত সেলিমের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার সিএনজি অটোরিকশাটি থানায় নিয়ে যায়। অন্যদিকে শুক্রবার (২ আগস্ট) র‌্যাব ১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন ঘটনা জেনে নি’র্যাতিত মেয়েটি ও তার বাবাকে তার কার্যালয়ে নিয়ে যান।

পরে তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ শুনে মামলা করার জন্য শিবপুর থানায় পাঠান। পরে ওই রাতেই মামলা নেয় পুলিশ। এই বিষয়ে জানতে বাঘাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তরুণ মৃধার ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। প্রতিবারই তার মুঠোফোন দুটো বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ওই ৯ নং ওয়াডের ইউপি সদস্য মো. আবু সিদ্দিক মুঠোফোনে জানান, আমরা ঘটনা জেনেছি গত সোমবার এলাকায় পুলিশ আসার পর। এই ঘটনায় আপোষ মিমাংশার কোন চেষ্টা আমরা করিনি। শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, এই ঘটনায় ওই মেযের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। অভিযুক্ত আসামীদের সবাই পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিকভাবে আপোষ মীমাংষার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি এমন চেষ্টা করে থাকেন তারাও অপরাধ করেছেন।

এখানে কমেন্ট করুন: