ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরীকে ব্যাপক মারধর করে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীর দাবি, পরে তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে সেই পুলিশ কর্মকর্তা। এই ঘটনায় সোমবার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উবায়দুল্লাহ নামের সেই দপ্তরি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট রাত ১০টার দিকে আরও ৫ পুলিশসহ সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর মডেল থানার এসআই জামিরুল ইসলাম। তারা বিদ্যালয়ের দপ্তরি উবায়দুল্লাহর কক্ষের দরজায় টোকা দিয়ে প্রথমে বশির ও পরে বাচ্চু নামে কেউ আছে কিনা জানতে চায়। তার পকেট তল্লাশি করে। একপর্যায়ে, উবায়দুল্লাহকে স্কুলের সব শ্রেণির দরজা খুলতে বলেন এসআই জামিরুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা।

কক্ষগুলোতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে পুনরায় আবার উবায়দুল্লাহকে নিয়ে তার থাকার কক্ষটিতে আসে। এসময় আবার তার পকেট চেক করে কয়েকটি ইয়াবা ট্যাবেলট কৌশলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর এসআই জামিরুল তাকে ‘ইয়াবা ব্যবসা’ ব্যবসায়ী বলে মারধর করেন। এর আগে, বিভিন্ন শ্রেণি কক্ষে ঘুরে দেখার সময় একটি কক্ষে শিক্ষিকাদের রাখা হিজাব এবং শিশু শ্রেণি কক্ষে শিশুদের বসার জন্যে রাখা চাটাই দেখে তাকে অবৈধ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন কানে এবং মাথায় বেধড়ক মারধর করেন। এই সময় উবায়দুল্লাহ সাথে থাকা তার ভাতিজাকেও আটক করে পুলিশ। উবায়দুল্লাহ হাত থেকে মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এরপর উবায়দুল্লাহ পিতা ক্বারী নূরুল ইসলামকে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন জামিরুল। এই টাকা নিয়ে জামিরুল সেখান থেকে চলে যান। যাবার আগে উবায়দুল্লাহর পিতার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন এবং এই বিষয়ে কাউকে কিছু বললে উবায়দুল্লাহকে মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবে বলে হুমকি দেন।

উবায়দুল্লাহকে পরদিন প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে ও পরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ দেখানো হয়। উবায়দুল্লাহ ঠিকভাবে কানে শুনছেন না।

চিকিৎসক এবিএম মুছা চৌধুরী জানান, ওবায়দুল্লাহ কানের আঘাত গুরুতর। প্রচণ্ড আঘাতে তার কানের পর্দা ফেটে গেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন অভিযোগটি শুনেছেন জানিয়ে বলেন, তাদেরকে বলেছি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে।

এলাকাবাসী জানায়, এসআই জামিরুলের বিরুদ্ধে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা হাতানোর আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন খান আর তার বাড়ি একই জেলায় এবং কখনো কখনো এই শীর্ষ কর্মকর্তা তার আতœীয় হয় এই পরিচয় দিয়ে দাপটের সঙ্গে এসব অপকর্ম চালিয়ে গেছে সে। এছাড়া সাবেক এই পুলিশ সুপারে স্ত্রী উম্মে সালমা মুন্নি দোহাই দিয়ে এই সকল অপর্কম চালিয়ে আসছিলেন।
তবে অভিযেগে বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জামিরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।
তবে তার অভিযোগে বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোমবার সন্ধ্যায় জানান আমি চট্রগ্রামে আছি, বিষয়টি জেনেছি, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এখানে কমেন্ট করুন: