ঢাকার অদূরে কৃষির পাশাপাশি শিল্প সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে সুপরিচিত একটি জেলার নাম নরসিংদী। ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে স্থলপথ, রেলপথ ও নদী পথে দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জেলার সাথে রয়েছে এখানকার উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা।
উন্নত ও সহজ এই যোগাযোাগ ব্যবস্থার কারণেই এগিয়ে যাচ্ছে এখানকার কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনীতি। আধুনিক ও সভ্যতার এ যুগে যেমনি দ্রুত গতিতে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে এই জেলা, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতাও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় অপরাধ প্রবণ জেলা হিসেবে নরসিংদীর নাম ওঠে আছে সব সময়।
এ অঞ্চলে খুন, ডাকাতি, লুটপাটের ইতিহাস বেশ পুরনো। সেই সাথে রয়েছে চরাঞ্চলের বর্বর, প্রাণঘাতী টেঁটাযুদ্ধ। এই জেলার আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে সকল সময়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যেই থাকতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ বিভাগকে।
গত এক দশকে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় অপরাধের সংখ্যা কমে আসলেও তা সন্তোষজনক নয়। নতুন প্রজন্মের জন্য বরাবরই একটি বাসযোগ্য নরসিংদীর প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
এবার নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য নরসিংদী গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নরসিংদীর নবাগত পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার (বিপিএম বার, পিপিএম)।
তার যোগদানের পর থেকে নরসিংদী থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ করতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে জেলা পুলিশ। বিশেষ করে সকল অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু মাদক বন্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে পুলিশ বিভাগ।
রাতের বেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় আকস্মিকভাবে উপস্থিত হচ্ছেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার নিজেই। সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা যাচাই বাছাই করে চালাচ্ছেন বিশেষ অভিযান। চরাঞ্চলের প্রাণক্ষয়ী টেঁটাযুদ্ধ বন্ধের জন্য শুরু করা হয়েছে ব্যাপক পুলিশী তৎপরতা।
এরই মধ্যে পুলিশ সুপারের নির্দেশে বন্ধ হয়েছে জেলার সড়ক মহাসড়কে বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি। সড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ করা ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তৎপরতা চালাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ।
নরসিংদী জেলা কমিনিটি পুলিশিং ফোরাম এর সভাপতি ড. মশিউর রহমান মৃধা জানান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের (বিপিএম বার, পিপিএম) যোগদানের পর অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে নড়েচড়ে বসেছে জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপারের নির্দেশে অপরাধীদের দমন করতে দিনরাত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে গোয়েন্দা, থানা ও জেলা পুলিশ। এসব অভিযানে পুলিশ সুপার নিজেও অংশ নিচ্ছেন। এতে জেলার মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রেফতার হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীরা।
পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার নরসিংদীতে যোগদানের পর জেলা পুলিশের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে অপরাধীদের মধ্যে। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা আইনের ফাঁকে দ্রুত ছাড়া পাওয়ায় আবারও একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এদিকে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার (বিপিএম বার, পিপিএম) নিরাপদ নরসিংদী গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে, জানান, সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলা ও রাজধানী ঢাকার সাথে সহজ যোগাযোগের কারণে অপরাধীরা এ জেলায় বেশি সক্রিয়। সেই সাথে রয়েছে স্থানীয় বিরোধ। এ জেলায় মাদক ব্যবহারের প্রবণতাও বেশি। চাহিদা বেশি থাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে লাভজনক বাজার নরসিংদী।
তিনি বলেন, নরসিংদীতে এমন বহু পরিবার রয়েছে যেসব পরিবারের কেউ না কেউ মাদকের সাথে জড়িত। আর অপরাধের সূত্রপাত হয়ে থাকে মাদককে ঘিরেই। তাই নরসিংদী থেকে মাদক সম্পূর্ণ নির্মূল করতে জেলা পুলিশ তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজের প্রত্যেকটি শ্রেণী পেশার মানুষ কে মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন এলাকায় ব্লক রেইড দেয়ার পাশাপাশি জনসাধারণের সাথে মত বিনিময় করা হচ্ছে।
সব অপরাধকেই আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা হয়েছে। এসবের পাশাপাশি ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধে জেলায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। থানা হবে সাধারণ মানুষের কাছে সেবার প্রাণকেন্দ্র এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য নরসিংদী জেলা গড়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
গত ২৭ জুলাই হতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় গ্রেফতার হয়েছে ২২৭ জন মাদক ব্যবসায়ী, ২৪ জন ডাকাত। উদ্ধার করা হয়েছে ১২ হাজার ৮৯৭ পিস ইয়াবা, ১৪২ লিটার চোলাইমদ, ৩০২ ক্যান বিয়ার, ৫ কেজি গাজা ও ২১ বোতল ফেনসিডিল। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। নরসিংদীর চরাঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪৪টি টেঁটা, ৬২ টি ককটেল ও ৫ টি রামদা। গ্রেফতার করা হয়েছে ৯১৭ জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী।