নরসিংদী সদর উপজেলায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিবেশী পরিবারের হামলায় এক দম্পতি গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলার সময় চাপাতির কোপের আঘাতে ওই তরুণের ঠোঁটে ছয়টি ও মাথায় দুইটি সেলাই দিতে হয়েছে। অন্যদিকে উপর্যুপরি মারধরের কারণে তার অন্তসত্বা স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে বর্তমানে ওই দম্পতি নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের সংগীতা এলাকায় ওই দম্পতির নিজ বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার পরপরই স্থানীয় লোকজন ওই দম্পতিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ওই হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই দম্পতির নাম মো. সবুজ মিয়া (৩৪) ও সোনিয়া আক্তার (২৫)। মো. সবুজ মিয়া পেশায় একজন দলিল লেখক ও নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের সংগীতা এলাকার মোসলেম উদ্দিন মোক্তারের ছেলে।

ওই দম্পতির স্বজনরা জানান, মো. সবুজ মিয়ার বাড়িটিতে কাগজে কলমে জমির পরিমান চার শতাংশ হলেও তার দখলে আছে প্রায় আড়াই শতাংশ। বাকী জমি আশেপাশের প্রতিবেশীদের দখলে রয়েছে। ঘর তোলার পরিকল্পনা থেকে গত দুইবছর আগে বাড়ির পেছনের অংশে পৌনে তিন শতাংশ জমি হুমায়ুন কবির ভূঁইয়ার কাছ থেকে কেনেন সবুজ। পরবর্তী সময়ে ওই জমির কিছু অংশে তার ভাগ আছে বলে দাবি করেন প্রতিবেশী সুমন মিয়া।
চিকিৎসাধীন মো. সবুজ মিয়া বলেন, আমার কেনা জমিটি নিয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কয়েকদফা শালিস-বৈঠকে বসা হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সদর থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও স্থানীয় চিনিশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়ার উপস্থিতিতে শালিসে বসা হয়। এই শালিসের রায় আমার পক্ষে আসে। এর পরদিন অর্থাৎ গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে আমার বাড়িতে গ্যাসলাইন স্থানান্তরের লোক আসে। এতে প্রতিবেশী সুমন মিয়া উত্তেজিত হয়ে তার বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা ফালানী বেগমসহ ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় সুমন মিয়ার চাপাতির কোপের আঘাত লাগে আমার ঠোঁটে ও মাথায়। আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে আমার অন্তসত্বা স্ত্রী সোনিয়া বেগম ও মা সুফিয়া বেগমকে লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি মারধর করা হয়। হাসপাতালে আমার ঠোঁটে ৬টি ও মাথায় ২টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আমার অন্তসত্বা স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর আমি এই ঘটনায় মামলা করবো।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাহিমা শারমিন জানান, আহত সবুজ মিয়াকে মোট ৮টি সেলাই দিতে হয়েছে। অন্যদিকে তার অন্তসত্বা স্ত্রীর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। ফলাফল হাতে পেলে বিস্তারিত জানানো যাবে। তাদের দুজনই বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে সদর থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও স্থানীয় চিনিশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, সামাজিকভাবে বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান করে দেওয়া হয়েছিল। উভয়পক্ষ তা মেনেও নিয়েছিল। এর একদিন পরই এমন ঘটনা শুনে মর্মাহত হয়েছি। এরপর যা করার তা পুলিশ করবে।
হাসপাতালে এসে আহত ওই দম্পতিকে দেখে গেছেন নরসিংদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক জাকির হোসেন। তিনি জানান, এই দম্পতি বর্তমানে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি, সুস্থ হয়ে থানায় এসে অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। স্থানীয়ভাবে মিমাংশার পরও কেন এমন হামলার ঘটনা ঘটলো, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

এখানে কমেন্ট করুন: