মো.শফিকুল ইসলাম মতি,নরসিংদী:নরসিংদীতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের মিছিলে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে দুজন নিহতের ঘটনায় খায়রুল কবির খোকনসহ আসামির গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে শহরের জেলখানা মোড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ ও পরে আদালত প্রাঙ্গণ-সংলগ্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।এর আগে গত ২৫ মে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের জেলখানা মোড়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ঢোকার পথে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান ও তাঁর কর্মী আশরাফুল হক (২২)। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই ছাদিকুরের মৃত্যু হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে আশরাফুলও মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত ছাদিকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করা হয়। এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নেতা-কর্মীদের সূত্র জানা গেছে, আজ সকালে নরসিংদী আদালতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির জামিন চাইতে আসবেন, এমন খবরে এই বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টায় শহরের উপজেলা মোড় থেকে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি আদালত প্রাঙ্গণ-সংলগ্ন সড়ক ধরে এগিয়ে যায়। কিন্তু খায়রুল কবির খোকন আজ আদালতে আসছেন না, জানতে পেরে মিছিলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড়ে যায়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠিয়ে তাঁরা পুনরায় ওই সড়ক ধরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা মোড়ে ফিরে যান। যাওয়ার পথে আদালত প্রাঙ্গণ-সংলগ্ন সড়কে দাঁড়িয়ে খায়রুল কবির খোকন ও তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।

কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সিনিয়র সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি খায়রুল কবির খোকনসহ সব আসামির গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আমরা কাফনের কাপড় পরে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছি। আমরা সবাই চাইছি, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। যত দিন তাঁরা গ্রেপ্তার না হবেন, তত দিন আমরা আন্দোলন করেই যাব।’

গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মাইন উদ্দিন ভূঁইয়াকে দেওয়া হয় সিনিয়র সহসভাপতি পদ। এতে তাঁর ২০-২৫ জন কর্মী-সমর্থক ক্ষুব্ধ হয়ে ওই রাতেই জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেয়। ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবিরের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা।

ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন পদবঞ্চিতরা। ১১ ফেব্রুয়ারি শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবির খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। ৫ এপ্রিল কার্যালয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। ২০ মে আবার ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ মে বিকেলে পদবঞ্চিত নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় দুর্বৃত্তের গুলিতে দুজন নিহত হন।

এখানে কমেন্ট করুন: