নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:
নরসিংদীতে মাত্র ১০ ইঞ্চি সরু একটি রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পরিবারটিকে। ফলে এ পরিবারের কেউ অসুস্থ্ হলেও হাসপাতালে নেয়া সম্ভব ছিল না। এরইমধ্যে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন ওই পরিবারের দুজন। এমনকি সড়ক না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জেলা কারাগারের সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে মরদেহ বের করে দাফন করতে হয়েছে।আর এমন করুণ ঘটনাই ঘটেছে নরসিংদীর ভেলানগর স্টেডিয়াম এলাকায়। সম্প্রতি এ ঘটনার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মানবিক দিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন ডিসি সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে ‘কিউট’ কসমেটিক কোম্পানির মেশিন মেকানিক শাখাওয়াত হোসেন নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায় দুই লাখ চল্লিশ হাজার টাকায় সাড়ে তিন শতাংশ জমি কেনেন। ওই জমিতে আধাপাকা স্থাপনা করে বসবাস শুরু করেন। এরইমধ্যে গত ছয়-সাত বছর আগে শাখাওয়াত হোসেনের বাড়ির চারপাশে বসতি গড়ে ওঠে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় বাড়িতে যাওয়া আসার রাস্তা। এরপর থেকে ১০ ইঞ্চি সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন এ পরিবারের লোকজন।গত বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শাখাওয়াত হোসেন মারা যান। মারা যাওয়ার পর মরদেহ বের করা নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। পরে পাশের বাড়ির একটি দেয়াল ভেঙে শাখাওয়াত হোসেনের মরদেহ বের করে দাফন করা হয়।এরপর থেকে রাস্তা বড় করার জন্য ছোটাছুটি শুরু করেন নিহত শাখাওয়াতের পরিবার। শাখাওয়াতের বাড়ির ডান পাশেই জেলা কারাগারের সীমানা প্রাচীর। সামনে এনকেএম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস স্কুলের অডিটরিয়াম। বাম পাশে কবির হোসেনর ৫ তলা বাড়ি। চারপাশে বিভিন্ন স্থাপনার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবারটি।১৫ দিন আগে ভোরে শাখাওয়াত হোসেনের ছোট ভাই আহসান হাবিব স্ট্রোক করেন। ওই সময় তাদের পরিবারের লোকজন আহসানকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেনি। তাই অনেকটা বিনা চিকিৎসাতেই মারা যান আহসান। কিন্তু মরদেহ বের করা নিয়ে দেখা দেয় পুনরায় বিপত্তি।নিরুপায় হয়ে এলাকার লোকজন দমকল বাহিনীকে খবর দেয়। মরদেহ বের করার কোনো উপায় না পেয়ে দমকল বাহিনী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের নিকট ছুটে যায়। পরে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে জেলাখানার প্রধান ফটক দিয়ে আহসানের মরদেহ বের করার অনুমতি দেয়। মরদেহ বের করার সময় ছবি তুলে ফেসবুকে দেন এলাকাবাসী। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।দমকল বাহীনির সদস্য নুরুল হক বলেন, বাড়িটিতে যাতায়াতের জন্য যে জায়গা আছে, তাতে একটি মানুষ স্বাভাবিক ভাবে সোজা হয়ে যেতে পারবে না। তাই আমরা এ রাস্তা দিয়ে মরদেহ বের করতে পারিনি। নিরুপায় হয়ে একটি বাড়ি ও জেলাখানার সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে স্ট্রেচারে করে মরদেহ বের করে আনি।এ ব্যাপারে নরসিংদীর ডিসি সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি আগে আমার জানা ছিল না। বিষয়টি যে ভাবে সমাধান করা যায় আমরা সমাধান করবো।