নরসিংদী-১ সদর আসনে বিএনপি’র নির্বাচনী তৎপরতা এখন প্রায় বন্ধ। অভিভাবকহীন অবস্থায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। গায়েবি নাশকতার মামলায় আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী সদর আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খায়রুল কবির খোকন এখন কারাগারে। একই মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়েও কোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ, কমবেশি মাসখানেক পূর্বে গ্রেফতার হয়ে নরসিংদী কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ।
গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নরসিংদী শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ ফকির রনীসহ ইউনিয়ন ওয়ার্ড শহর ও থানা পর্যায়ের বহু সংখ্যক নেতাকর্মী। খায়রুল কবির খোকনসহ জেলা, থানা ও শহর বিএনপির নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার ও আত্মগোপন করার কারণে বিএনপি’র ভোট কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশায় বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশ নিলেও এখন তাদের সেই মনোবল ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তারা বলেছে, নির্বাচনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা নিয়েই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে থানায় থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। নরসিংদী সদর থানায় দায়েরকৃত মামলা দুটিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খায়রুল কবির খোকনের নাম ছিল না। মামলা দায়েরের সময় জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ অন্য মামলায় কারাগারে ছিলেন।
নরসিংদী শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামাল ছিলেন হজ্ব পালনে মক্কা মদিনায়। কিন্তু সম্প্রতি মামলা দুটিতে খায়রুল কবির খোকন, মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ এবং গোলাম কবির কামালকে জড়িয়ে প্রায় তিনশ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হঠাৎ চার্জশিট দাখিল করে গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। পুলিশের এই গ্রেফতার এড়ানোর জন্যই গত বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যান খায়রুল কবির খোকন ও যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ। কিন্তু খায়রুল কবির খোকন কারাগারে গেলেন জামিন নামঞ্জুর হয়ে, যুবদল সভাপতি মহসিন হুসাইন বিদ্যুৎকে জামিন পেয়েও কারাগারে যেতে হয়েছে।
শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামাল জানিয়েছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। নরসিংদী জেলা শহর ওয়ার্ড থানা ইউনিয়ন পর্যায়ের কোন উল্লেখযোগ্য নেতা মামলার বাইরে নেই। মামলা দায়েরের সময় যারা বাদ পড়েছিল এবার চার্জশিট দেওয়া সময় তাদের সবাইকে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এই চার্জশিটে তিনশত নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদেরকে আসামি করায় এসব সাংগঠনিক কাঠামোগুলো মূলত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে দশম জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও আরো একদলীয় নির্বাচন। সরকার এমন এক সময় বিএনপির মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করছে যখন জজ কোর্ট, হাইকোর্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
গায়েবি মামলা দায়ের, গায়েবি মামলায় নিরপরাধ নিরীহ নেতাকর্মীদের আসামি করা এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ করে চার্জশিট দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা উদ্দেশ্য এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। মামলা দায়ের এবং নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা একই সূত্রে গাঁথা। সরকারের এই অপকৌশল নিতান্তই স্থূল অপকৌশল। যা অত্যন্ত সাধারণ ভোটাররাও বুঝে ফেলেছে।
এদিকে গতকাল আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতারকৃত নরসিংদী জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি একটি পুরনো মামলায় জড়িয়ে ১০ দিনের রিমাÐ আবেদনসহ গতকাল শুক্রবার বিকেলে আদালতে চালান দিয়েছে। কিন্তু কোর্ট বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন শুনানি করতে পারেনি।