নিউজ সময় ডেস্ক: ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে বিজয়ী ধানের শীষ, এবারও প্রার্থী বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তারপরও নরসিংদী-২ আসনে বিএনপির প্রচার তেমন দেখা যাচ্ছে না।
ভোটের ১০ দিন আগে নরসিংদী সদর উপজেলার তিনটি, পলাশ পৌরসভা ও এই উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসন ঘুরে ধানের শীষের চেয়ে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার পোস্টারই বেশি দেখা গেছে। তবে পুরো এলাকা সরব নৌকার প্রচারে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তার নির্বাচনী ক্যাম্পগুলো সরব নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে। রাস্তাঘাট ছেয়ে আছে নৌকার পোস্টার।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, তাদের প্রচার করতেই দিচ্ছে না পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, এমনকি সাবেক মন্ত্রী মঈন খান প্রচারে নামার পর তার উপরও হামলা হয়েছে।
তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, মঈন খান ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছেন বলে তার পক্ষে এখন কেউ নেই।
ঢাকার কাছে নানা শিল্প কারখানায় ভরা নরসিংদীর এই আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে এক লাখ ১৪ হাজার ৮৩৪ নারী, এক লাখ ১৯ হাজার ৫৩৯ জন পুরুষ।
ধানের শীষের মঈন খান ও নৌকার দিলীপের পাশাপাশি এখানে প্রার্থী আছেন জাতীয় পার্টির মো. আজম খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আরিফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সাদিকুন নাহার।
এলাকা ঘুরে হাতপাখার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির আজম খানের কিছু পোস্টারও দেখা গেছে।
মঈন খানের নিজের বাড়ি চরনগরদী এলাকা ছাড়া আর কোথাও ধানের শীষের পোস্টার চোখে পড়েনি। বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্পও দেখা যায়নি কোথাও।
বিএনপি নেতারা বলেন, মামলার কারণে তাদের অনেকে এলাকাছাড়া। যারা আছেন, তাদের কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। গত ১১ ডিসেম্বর আমদিয়া ইউনিয়নের বেলাব বাজারে এবং ১৬ ডিসেম্বর পাঁচদোনায় মঈন খানের নির্বাচনী গণসংযোগে হামলা হয়েছে, ক্ষমতাসীনরা নানা হুমকি দিচ্ছে। ফলে প্রচারে নামা যাচ্ছে না।
পাঁচদোনা ইউনিয়নের বিএনপিকর্মী আকতার হোসেন বলেন, “কেউ একটা পোস্টার লাগাইতারে না, মিছিল করতারে না (কেউ পোস্টার লাগাতে পারছে না, মিছিল করতে পারছে না)। আওয়ামী লীগের লোকেরা মারতো আইয়ে। আর নেতাগো সবাইরে তো পুলিশে দৌড়ের ওপর রাকছে। নির্বাচন ক্যামনে করব?”
প্রচারে না নামার কারণ জানিয়ে এক বিএনপিকর্মী বলেন, “আমরা বিএনপিরে পছন্দ করি, কিন্তুক লাভের লাইগ্গা তো দল করি না। হুদাহুদি মাইর খামু নাকি?”
বিএনপি নেতা-কর্মীদের কথায় সমর্থন মিলেছে এলাকার বেশ কয়েকজনের কথায়।
দক্ষিণ নেহাব গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ভাষায়, “দেইক্কা মনে অইতাছে, ভোট সুষ্ঠু অইত না। প্রশাসন নিরপেক্ষ না। হেদিন মঈন খানের মিটিংয়ে হামলা করছে, হের গাড়ি ভাঙছে, মোটর সাইকেল ভাঙছে।
“কিন্তুক পুলিশ খালি মঈন খানের কর্মীগো ধরতাছে। নিরপেক্ষ অইলে দুইপক্ষের লোকরে আটকাইত, মারামারি দুই পক্ষই করছে।”
মঙ্গলবার জিনারদী এলাকায় গণসংযোগ করেন মঈন খান। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনে হারের আশঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, “আওয়ামী লীগ বুঝে গেছে, তাদের সন্ত্রাসীরা ছাড়া পলাশের আর কেউ তাদেরকে একটি ভোটও দেবে না। এ অবস্থায় তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ এলাকা সন্ত্রাসী দিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, যাতে করে তারা কেউ ভোট কেন্দ্রে না যায়।”