নরসিংদী জেরা প্রতিনিধি:
বসতভিটার কিছু দূরেই ফসলি জমি। ধানখেতে সবুজের সমারোহ। চাষ করা হয় ধান, পুইশাখ, ধে ডাটা, সরিষা, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন শস্য। এসব খেতের পাশেই অনেক জমি ১০ থেকে ১২ ফুট নিচু। সেখান থেকে যন্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে জোড় করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে।এই চিত্র নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর ও বিরিন্দা গ্রামের। গ্রামবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল নিরিহ মানুষের ফসলি জমি থেকে প্রকাশ্যে জোড় করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায় ।

ডাঙ্গার কাজৈর গ্রামের বসতভিটার পাশে ৩০০ বিঘা জমি রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩টি স্পট থেকে প্রায় ৫০ বিঘা জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে।জমির মালিকদের অনুমতি না নিয়ে জোরজবরদস্তি করে মাটি কাটা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে মারধর ও হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রামবাসী। সরেজমিনে কাজৈর গ্রামের কয়েকটি ফসলী জমি ঘুরে দেখা যায়, একএকটি জমিতে ৩ থেকে ৪টি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। কয়েক মিনিট পর পর একএকটি ট্রলি ভরে এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাশ্ববর্তী ইটভাটা গুলোতে। জয়নাল নামে এক ভ্যাকু চালকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ যাবৎ তিনি এখান থেকে মাটি কাটছেন।

প্রতিদিন শতাধিক ট্রলি ভরে পাশ্ববর্তী ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাটি কাটার বিষয়ে তিনি জানান ইটভাটার মালিক এসব জমি কৃষকদের থেকে কিনে নিয়েছেন।মালিকদের কথায় তারা এখান থেকে মাটি কাটছেন। অপরদিকে ডাঙ্গার বিরিন্দা গ্রামে জসিম মিয়া ও লাট মিয়া নামে দুই মাটি ব্যবসায়ী ওই গ্রামের প্রায় তিন বিঘা ফসলী জমিতে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে জসিম মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, কৃষকরা এই জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে তাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই তারা জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। জমি থেকে ৫ থেকে ৬ ফুট খনন করে মাটি সংগ্রহ করবেন বলেও তিনি জানান।এদিকে স্থানীয় কৃষকরা জানান, ফসলী জমির মাটি তারা বিক্রি করেনি। তারা জোড়পূর্বক মাটি কাটছেন। জমির মধ্যখান থেকে গভীর খনন করে মাটি কাটার ফলে পাশের জমিগুলোও ভেঙে যাচ্ছে। যার কারণে অনেকই বাধ্য হয়ে ভাটার মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি করছেন। তারা এলাকার প্রভাশালী বলে কেউ তাদের বাধাঁ দিতে সাহস পাচ্ছেনা।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও দেখেও না দেখার বান করছেন। কাজৈর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম নামে ব্যাক্তি জানান, সড়কপথে বেপরোয়া ট্রলি দিয়ে ইটভাটার মাটি আনা নেওয়া ফলে গ্রামের অনেক রাস্তা ভেঙে গেছে।

এছাড়া মাটির ধূলায় আশেপাশের ঘরবাড়ি ও সবজিবাগানও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিছু বললেই ইটভাটার মালিকরা হুমকী দিয়ে যায়। তাদের কাছে সাধারণ গ্রামবাসী অনেকটা জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। এদিকে ডাঙ্গার ইউনিয়নের ইটভাটা গুলোর বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা যায়, শুধু মাত্র এই ইউনিয়নে ছোটবড় মিলিয়ে ১৮ থেকে ২০টি ইটের ভাটা রয়েছে। যার অধিকাংশ ইটভাটা ফসলী জমিতে অবস্থিত। এর মধ্যে কোনটিরই পরিবেশ ও কৃষি অফিসের ছাড়পত্র নেই। ডাঙ্গার ৪নং ওয়ার্ড কাজৈর গ্রামের ফসলী জমির উপর থ্রি সেভেন নামে একটি বিশাল ইটভাটা রয়েছে। এই ইভাটার পাশেই রয়েছে সরিষা খেত। গত কয়েকদিন যাবত এই ইটভাটায় মাটি আনা নেওয়ার কারণে সরিষা খেত অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। খোজ নিয়ে জানা যায় ভাটার মালিক জালাল হোসেন ওই ওয়াডের ইউপি সদস্য। জালাল হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ব্যবসা করলে একটু আকটু ক্ষতি হবেই। এটা কোন সমস্যা না।

এছাড়া ফসলী জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি জানান, ইউনিয়নের প্রতিটি ইটভাটার মালিক ফসলী জমির মাটি কিনছে আমি কিলনে সমস্যা কি?। কৃষকরা নিজেদের ইচ্ছাই মাটি বিক্রি করছে। এখানে কেই জবরদখল করেনি।এদিকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাবের উল হাই জানান, জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অত্যাধিক ইটভাটায় এলাকার ফসলী জমি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করে জানান, প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এসব বিষয়ে পলাশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারহানা আলী বলেন, ফসলী জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এখানে কমেন্ট করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published.