কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ষোলপাশা ইউনিয়নের নারায়ণপুরের ইটভাটায় ট্রাক উল্টে পড়া কয়লার চাপে শ্বাসরোধ হয়েই ঘুমন্ত অবস্থায় শ্রমিকরা মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।

আজ শুক্রবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে নারায়ণপুর এলাকায় এস এম কাজী অ্যান্ড কোং নামে ইটভাটায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ।

দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ভোরে ট্রাক থেকে কয়লা আনলোড করা হচ্ছ্লি। এ সময় একটি চাকা ফেটে যায়। তখন ট্রাকটি উল্টে পাশের একটি ঘরের ওপর গিয়ে পড়ে। সেটি এক ধরনের লেবার শেড। এখানেই ইটভাটার শ্রমিকরা মেস করে থাকতেন।’

‘এই ঘরে মোট ১৮ জন শ্রমিক থাকতেন। তাঁদের মধ্যে একজন ঘরে ছিলেন না। দুর্ঘটনার পর দুজন বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। আর বাকি ১৫ জন ঘুমে ছিলেন।’

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘মূলত কয়লা গিয়েই ঘুমন্ত শ্রমিকদের ওপর পড়ে। শীতের মধ্যে শ্রমিকরা কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। তার ওপর কয়লা পড়ে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এক ধরনের শ্বাসরোধ হয়ে তাঁরা মারা গেছেন।’

দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ১২ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আরো একজন মারা যান বলে জানান চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মাহফুজ। তিনি আরো বলেন, বাকি দুজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নিহতদের মধ্যে সাতজন সনাতন ধর্মাবলম্বী আর বাকি তিনজন মুসলিম। তাঁরা হলেন—কণক চন্দ্র রায়, বিকাশ চন্দ্র রায়, মিলন চন্দ্র রায়, দিপু চন্দ্র রায়, রঞ্জিত চন্দ্র রায়, মনোরঞ্জন চন্দ্র রায়, অমিত চন্দ্র রায়, শংকর চন্দ্র রায়, বিপ্লব চন্দ্র রায়, তরুণ চন্দ্র রায়, মো. মাসুদ, মো. মোরসালিন ও মো. সেলিম। সবাই নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার রাজবাড়ী, শিমুলবাড়ী, দিবাড়িয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

ওসি জানান, লাশগুলো সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ট্রাকের চালক দুর্ঘটনার পর পরই পালিয়ে গেছেন। ইটাভাটার মালিকপক্ষেরও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ট্রাকটির লোড-ক্যাপাসিটি কী পরিমাণ ছিল আর কী পরিমাণ কয়লা তাতে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কি না, সেটাও পুলিশ খুঁজে দেখছে বলে জানান ওসি।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের মরদেহগুলো তাঁদের পরিবারের কাছে পাঠানো এবং সৎকার ও দাফনের জন্য।

নিহতদের অনেকের আত্মীয়স্বজন আশপাশের ইটভাটায় কাজ করেন। খবর পেয়ে তাঁরাও সেখানে আসেন। তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অন্য কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এর পাশাপাশি এলাকার হাজার হাজার মানুষ দুর্ঘটনাস্থলে আসছেন দেখার জন্য। ইটভাটায় পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এখানে কমেন্ট করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *