
মো.শফিকুল ইসলাম মতি,নরসিংদী : নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার এমপিওভুক্ত খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী আব্দুল খালেক এক সাথে তিন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেনা জেলা রেজিষ্টার অভিযোগ এলাকাবাসীর। সোমবার সকালে মরজাল কাজী অফিসে গেলে বেড়িয়ে আসে এসব তথ্য। কাজী আব্দুল খালেক পেশায় একজন শিক্ষক তার পাশাপাশি তিনি শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের মুসলিম নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার হেড কাজী এছাড়াও রায়পুরার উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আর এসব কিছুই করছেন জেলা রেজেষ্টারকে ম্যানেজ করে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এছাড়াও গ্রাহকদের নিকট থেকে নির্ধারিত অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ারসহ বিভিন্ন হয়রানী করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমপিওভূক্ত স্কুলের একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সরকারী বেতন ভাতার উত্তোলন করে ভোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে বিয়ে ও তালাক কার্য সম্পাদন করে সেখান থেকেও বিপুল অংকের কমিশন হাতিয়ে নিচ্ছেন কাজী আব্দুল খালেক।
নিয়ম রয়েছে নিকাহ রেজিষ্ট্রারের লাইসেন্স পেতে হলে থাকতে হবে এলাকায়। আর যে এলাকার দায়িত্বে থাকবেন ঐ এলাকার থেকে বিবাহ তালাক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তিনি। আর একব্যক্তি দুই পদে থাকতে পারবেন না। সেই নিয়মকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি দুই উপজেলায় কাজী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এক উপজেলায় তিনি শিক্ষক ও কাজী আর অন্য উপজেলাও হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কাজী। একদিকে যেমন আইনের লঙ্ঘন তেমনি অন্যদিকে দুই জায়গার সেবা প্রত্যাশীরাও পাচ্ছেন না তাদের কাক্ষিত সেবা। আর এসব কিছুই হয়েছে আপন ভগ্নিপতি নরসিংদী জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেনের বরাতে। এদিকে নিকাহ ও তালাক নিবন্ধনে সেবা গ্রহীতারা তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এলাকাবাসী জানান, এ পদে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা কাজী মোঃ তাজুল ইসলাম মোল্লা অবসরে যাওয়ায় পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত বছর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিচার শাখা নিয়ম অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার পদে সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলে নিয়োগটি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মরজাল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজ চলমান রাখতে জেলা ও রায়পুরা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেন ও কাজী ওবায়দুল্লাহ’র যোগসাজশে জেলা রেজিস্ট্রারকে প্রভাবিত করে পাশ^বর্তী শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের কাজী মোঃ আব্দুল খালেক কে মরজাল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজীর পদটি ভাগিয়ে নেন।
এর পর থেকেই তিনি মরজাল ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার নামে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। এসব কর্মকান্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগও দাখিল করেন। এবিষয়ে জানতে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ আরমান মোল্লা জানান, মরজাল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজী আব্দুল খালেক মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে এবং গোপনে তদন্ত করা হয়। এসব তদন্তে জানাযায়, সকাল ১০ টার পর থেকে এলাকার বিবাহ তালাকসহ অন্যান্য কাজের জন্য নিকাহ রেজিষ্টাররের কাছে যান গ্রহকরা। আর সকাল থেকে দুপর পর্যন্ত কাজী আব্দুল খালেক স্কুল ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন বাড়ীতে ও নিকাহ রেজিস্ট্রি অফিসে বিবাহ পরান তিনি। এছাড়াও তিনি জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেন এর ভগ্নিপতি।
সেই সুবাদে তিনি সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এ পদেও র্দীর্ঘদিন যাবৎ দায়িত্ব পান করে আসছেন। কাজী আব্দুল খালেক সরকারি এমপিওভূক্ত স্কুল খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং যোশর ইউনিয়নের মূল কাজী হিসেবে কর্মরত আছেন তিন। তিনি এমপিওভূক্ত একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপপ্রপ্ত প্রধান শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় বিবাহ অনুষ্ঠানে তার পক্ষে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রার কাজ সম্পূর্ণ করা দূরুহ। তাই তিনি এসব অনুষ্ঠানে তার সহকারী হিসেবে অন্যজনকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন তিনি। সেসুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাল্যবিবাহ, সরকার নির্ধারিত ফি থেকে অধিক ফি আদায়, মিথ্যা বা ভূয়া নিকাহ রেজিস্ট্রার মাধ্যমে মোটা অংকের ফি আদায় করা তার নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যা কি-না আইন বহির্ভূত কাজ। এসব এনেহ ও অন্যায় কাজের ফলে সরকারের যেমন সুনাম নষ্ট হচ্ছে তেমনি ইউনিয়নে সামাজিক বিরোধ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি বেতন ভোগ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকাকে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা জানিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও ব্যবস্থা নিচ্ছেনা জেলা রেজিষ্টার। গনমাধ্যম কর্মীরা বারবার তার চেম্বারে গেলেও দেখা পাননি কাজী আব্দুল খালেক মিয়াকের। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বিয়ে পড়ানোর প্রলোভন দেখালে তিনি দুপুরের স্কুল ফাঁকি দিয়ে তার চেম্বারে ছুটে আসেন। গত এক মাসের বিবাহ নিবন্ধনের তালিকা চাইলে তা দিতে অসম্মতি পোষণ করে দ্রুত চেম্বার ত্যাগ করেন চলে যান তিনি।
পরে অন্য মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে প্রশ্ন না করে জেলা কাজী সমিতির সভাপতি ও জেলা রেজিস্ট্রার কে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আর আমি এখানে এমনি আসিনি সব মেনেজ করেই এসেছি। আর সবকিছু ম্যানেজ করেই কাজীর দায়িত্ব করছি। উপরের সবকিছু হাতে থাকলে ওইসব অভিযোগ দিয়ে কিছুই হবেনা। আর আমি নিজেই দায়িত্ব পালন করছি অন্য কাউকে দিয়ে বিবাহ তালক নিবন্ধন করানো হয় না।কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ওনি আমার আত্মীয়।
একব্যক্তি একাধিক পদে কাজ করতে পারবেন। এ ধরণের আইন আমার কাছে আছে। এই ব্যাপারে জানতে নরসিংদী জেলা রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের অফিসে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি তা কেটে দেন। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। আর এসব কথা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পরলে জেলা ব্যাপি সমালোচনার ঝর উঠেছে।