মো. হৃদয় খান: নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা সুনির্দিষ্ট ১৮ অভিযোগ ও তাকে লাঞ্ছিতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে কলেজের সাধারণ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের উপজেলা মোড়ে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়। এ সময় কলেজের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বর্তমান অধ্যক্ষের পরিবর্তন চেয়ে তিনি দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা।
লিখিত বক্তব্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, নরসিংদী সরকারি কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। লেখাপড়ায়, পরীক্ষার ফলাফলে, খেলাধুলায় ও সাংস্কৃতিক চর্চায় এক সময় জেলার নেতৃত্ব দিত এই কলেজটি। কিন্তু বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নাজুক, করুণ ও বেহাল অবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে। বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম স্যার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং চরম আকার ধারণ করেছে। মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষকদের তিনি কোনঠাসা করে ওনার পছন্দমতো কিছু শিক্ষকদের নিয়ে তিনি বিশেষ সিন্ডিকেট তৈরি করেন। শুধু ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদের অসন্তোষই নয়, অধিকাংশ শিক্ষক অধ্যক্ষের দুর্নীতি, অধ্যক্ষ হিসেবে অদক্ষতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা বলতেন, যা অতীতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পরিলক্ষিত হয়।
তারা আরো বলেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান অনেক কম, নিয়মিত ক্লাস হয় না। অনেক শিক্ষক ১১ টার ট্রেনে কলেজে আসেন আর দুপুর ১ টার ট্রেনে চলে যান। কিছু শিক্ষক আছেন ক্লাসের সময় প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যার প্রভাবে গত বছর ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ নিয়ে এই কলেজে ভর্তি হলেও মাত্র ২৪ জন জিপিএ-৫ পেতে সমর্থ হয়। মোট অকৃতকার্য হয় ৬৭৫ জন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, সকল শিক্ষক এক নয়, অনেক শিক্ষক আছেন যারা আন্তরিক ও কর্তব্যপরায়ণ। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের অধ্যক্ষ স্যার যোগদানের পর থেকে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদের কাছ থেকে রশিদ ছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায় ও নানাবিধ অব্যবস্থাপনা, অধ্যক্ষের পাঁচমাস কলেজে অনুপস্থিত থাকা, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, শিক্ষকদের মধ্যে চরম গ্রুপিং এবং অনিয়ম, দুর্নীতিতে কলেজটি আজ করুণ অবস্থায় ধুঁকছে। সম্প্রতি কলেজের দুটি ছাত্রবাসা বন্ধ করা হয় এবং সকল বিভাগের শিক্ষা সফর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত বছর অডিট টিম অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনলে কলেজের ফান্ড থেকে ১০ লাখ টাকা অডিট টিমকে প্রদান করে সমঝোতা করেন। অধ্যক্ষ স্যার কথায় কথায় শিক্ষা সচিব মহোদয়ের দোহাই দিয়ে থাকেন। এবং ওনার নাম ব্যবহার করে বলেন যে, ওনারা একই এলাকার ও বন্ধু মানুষ। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন।
এ ঘটনাসহ সুনির্দিষ্ট ১৮টি অভিযোগ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। টানা দুমাস আমরা শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আমরা কোনো ফলাফল পাইনি।
সম্প্রতি অধ্যক্ষ স্যারের কক্ষে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমরা আমাদের দাবি ও অধিকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাস্তবায়নে বিশ্বাসী। আমাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। তবে আমাদের দাবির সঙ্গে কলেজে পড়ুয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্র উপস্থিত থাকতে পারে।
দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, অদক্ষ ও ব্যর্থ বর্তমান অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম স্যারের পরিবর্তে সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অধ্যক্ষকে স্থলতাভিষিক্ত করার দাবিতে আগামীকাল ১৩ মার্চ হতে তিন দিন সকল ক্লাস বর্জনসহ কলেজের শহীদ মিনারে প্রতীকী অনশনও অবস্থান ধর্মঘট ঘোষণা করছি। যদি এ সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে পরবর্তীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মানববন্ধনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করে তারা আরো বলেন, নরসিংদী সরকারি কলেজটি বাঁচানোর স্বার্থে আমাদের আর্তনাদ শুনুন। কলেজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে, লুটপাটের বিশেষ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার স্বার্থে এবং কলেজটির বিপর্যয় রোধে বর্তমান অধ্যক্ষের পরিবর্তে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অধ্যক্ষকে স্থলাভিষিক্ত করে আমাদের কলেজের ২৫ হাজার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কলেজের সাধারণ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. জুবাইর হিমেল, যুগ্ম আহ্বায়ক দিদার হোসেন, এমরান চৌধুরী পলাশ, গোলাম দস্তসীরসহ শতাধিক শিক্ষার্থী।
এখানে কমেন্ট করুন: