প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ১০:১৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ২৫, ২০১৯, ৫:০৫ পি.এম
ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া ২০১৯ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে ইশরাত
মো. হৃদয় খান, স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বন্ধুত্ব দুই দেশের সীমানার মতোই কাছের। এই বন্ধন, বিশ্বাস, ভ্রাতৃত্ব আরও সুদৃঢ় করতে সংস্কৃতির আদান-প্রদানে ২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ইচ্ছায় শুরু হয় ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া’। এর আওতায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন অঙ্গনের ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে ভারত সফরে নিয়ে যায় ঢাকা ভারতীয় হাইকমিশন। ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে সপ্তমবারের মতো বাংলাদেশের যুব প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বরাবরের মতোই দীর্ঘ বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শত শত তরুণ-তরুণীর মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ইশরাত. বলা হচ্ছে, ভারতের জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যুবশ্রেণী। বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাচ্ছেন, তারাও যুবশ্রেণীর। বিভিন্ন অঙ্গনের এই তরুণ-তরুণীরাই আগামীতে নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশকে।
তাদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ইশরাত বিনতে রউফ। ঢাকায় জন্ম, বড় হওয়া ইশরাত এর স্কুল ও কলেজ ছিল দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ. বেবসায়ী পিতা জনাব এম আব্দুর রউফ ও সাংস্কৃতিক কর্মী মাতা নুরুন্নাহার শেলী তাঁদের দুই কন্যার শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন। এস এস সি ও এইচ এস সি তে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করার পর ইশরাত ঢাকা বিশবিদ্যালয় এর লোক প্রশাসন বিভাগ এ ভর্তি হন। তার অভাবনীয় একাডেমিক ফলাফল তাঁকে যেমন শিক্ষক ছাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পরিচিত মুখ করে তোলে, তার পাশাপাশি তার এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম ও তার অভিজ্ঞতা বাড়াতে থাকে। নিজ ডিপার্টমেন্ট এর একজন টপার হিসেবে মাস্টার্স শেষ করার পর তিনি আরো একটি সাফল্য অর্জন করেন। তিনি পৃথিবী বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল ম্যাডাম এর একজন মডেল হিসেবে পরিগণিত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি বিভিন্ন ভলান্টারি কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন, ইউ এস এইড এর নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এ তিনি ওয়ার্কশপ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন। নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে ইউ এস এইড এর আউটরিচ প্রোগ্রাম এও তিনি যোগদান করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
মাস্টার্স পরবর্তী কর্মক্ষেত্র " দি এশিয়া ফাউন্ডেশন " এ ইন্টার্ন হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি উন্নয়ন সেক্টর এর কাজ এর হাতে খড়ি পান . তার কর্মক্ষেত্র ছিল জাতীয় সংসদ এর পাবলিক রিলেশন বিভাগ এ। ভালো রেসাল্ট এর সুবাদ এ ইশরাত সর্বদা চাইতেন বিশবিদ্যালয় এর শিক্ষিকা হতে। তিনি দেশের একটি বেসরকারি বিশবিদ্যালয় নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এ শিক্ষকতা ও করেন. তাঁর শিক্ষকতার বন্ধুসুলভ পদ্ধতি, সিলেবাস এর বাইরে গিয়েও জীবনমুখী শিক্ষা প্রদান ও পাঠদান তাঁকে কর্মক্ষেত্রেও করে তুলে প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
ইশরাত বিনতে রউফ তাঁর কাজের পাশা পাশি লেগে পড়েন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জে সি আই এ তিনি পর্যায়ক্রমে প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সেক্রেটারি জেনেরাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রকল্প নিয়ে জিগেস করলে তিনি তাঁর একটি কাজ নিয়ে বলেন। তাঁর প্ল্যান করা একটি প্রকল্প ছিল spreading life spreading happiness, অর্থাৎ ছড়িয়ে দাও খুশি , যে প্রজেক্ট টির আওতায় কড়াইল বস্তি এর প্রায় পাঁচ শত শিশু হাত ধোবার সঠিক উপায় সম্পর্কে হাত এ কলমে শিক্ষা নিবার সুযোগ পেয়েছে, প্রায় 20 টি পরিবার এ হাইজিন ও স্যানিটেশন নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সাস্টেইনেবেল ডেভেলপমেন্ট গোল এ ক্ষুদ্র অংশ হতে পারার সুযোগ লাভ হয়েছে ।
বর্তমান এ ইশরাত কাজ করছেন একটি ন্যাশনাল ইয়ুথ লেড সংস্থা - জেন ল্যাব এর সাথে. জেন ল্যাব ও ইশরাত ইউ এন ডি পি এর গত তিন টি প্রকল্প এর কাজের সাথে জড়িত ছিলেন যার মধ্যে একটি ছিল ক্লাইম্যাথন। বাংলাদেশ এ এই প্রথমবার বিশবিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ক্লাইমেট নিয়ে চব্বিশ ঘন্টার টানা শিক্ষন কর্মশালা ও আইডিয়া কম্পেটিশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি এই প্রকল্প এ কমুনিকেশন ম্যানেজার হিসেবে প্রায় আড়াইশো ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কাজ করেছেন, যা কিনা তাঁর জন্যে সহজতর ছিল কারণ ইশরাত তাঁর ছাত্রজীবন, মডেল হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে ও সমাজ কর্মী হিসেবে মানুষের কাছে অতীব পরিচিত।
ইউ এন ডি পি র পরবর্তী প্রকল্প সমূহ তে ইশরাত সুযোগ পান কক্সবাজারের শুকনাছড়ি তে একটি স্কুল পরিদর্শনের যেখানে প্রায় চল্লিশ শতাংশ শিক্ষার্থী রোহিঙ্গা শিশু.তাঁদের সাথে কথা বলে , সময় কাটিয়ে তাঁর কেমন লেগেছে জিগেস করতে তিনি একটা কথাই বলেছেন - আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন, কোমলমতি শিশু ও তাঁদের পরিবারের এমন দুর্দশা দেখলে অনুধাবন আসে যে আমাদের জীবন এ যাই প্রাপ্তি তা এপ্রিসিএট করতে জানতে হবে . অনেক মানুষ অনেক অবর্ণনীয় কষ্টে আছে .তাঁদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াই মনুষ্যত্ব।
সম্প্রতি ইশরাত ওমেন চ্যাপ্টার এ লেখা শুরু করেছেন। তাঁর প্রথম আর্টিকেল ছিল ইংরেজিতে " moral policing: Breaching constitutional rights" । তাঁর এই লেখনী টি শিক্ষামূলক ও তথ্য বহুল যা প্রতিটি বাংলাদেশী, মূলত বাংলাদেশী নারীর পড়া জরুরি. কাজের নেশা ছাড়া আর কী নেশা আছে জানতে চাইলে তিনি এক সেকন্ড এ উত্তর দেন - ট্রাভেলিং। এখন পর্যন্ত এগারোটা দেশ ঘুরেছেন। বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও ভালোবাসার জায়গা চিটাগং ও কক্সবাজার ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইশরাতের বড় পরিসর এ সামাজিক উন্নয়ন এ কাজ করতে চান, যুব সমাজ ও আসন্ন যুব দের সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান।
ভারতে ইয়ুথ ডেলিগেশন এ একজন বাংলাদেশী প্রতিনিধি হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে এর গুরুত্ব জিগেস করলে তিনি দুই দেশের যুব সমাজের মধ্যে ঐকতান ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির কথা বলেন। বিগত সফরগুলোতে ভারতের রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ পেয়েছিল ডেলিগেটস টিম। শেষবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন ডেলিগেটরা। এবারও তেমন সুযোগ থাকতে পারে বলে জানা যায়। সফরকারীরা দিল্লি-আগ্রার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা, তরুণ প্রজন্মের উৎসাহদায়ী প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তির উৎকর্ষ ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। থাকতে পারে অন্য যে কোনো একটি রাজ্যে ঘোরার সুযোগ। এর আগে দিল্লির পাশাপাশি মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্য ঘোরার সুযোগ পেয়েছে ডেলিগেটস টিম। ঘোরার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সেখানকার মানুষের মাঝে তুলে ধরারও সুযোগ পাবেন।
Copyright © 2024 নিউজ সময়.কম. All rights reserved.