জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম ব্যুরো:
এক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার দুই উপজেলা প্রশাসন। বোয়ালখালী উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্বে রেখেছেন নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলায়।
এমনকি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) দপ্তরের ও একই অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ প্রতি উপজেলায় একজন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও ২৪মাসেও সরকারি এ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর গুলোতে স্থায়ী কর্মকর্তা নেই।
যার কারনে সরকারের গৃহিত নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে নানা অনিয়ম ও অনিশ্চয়তা। সরকারি গৃহিত উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নবসৃষ্ট কর্ণফুলী এলাকায় বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা সরকারি উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেনা।
ফলশ্রুতিতে আরো দেখা যায়, কিছুদিন আগে ফকিরন্নীরহাট রাস্তার মাথা থেকে হাটবাজার উজিরপুর সড়কের ৪০০ মিটার রাস্তার জন্য মন্ত্রীর বরাদ্দকৃত প্রায় ৫০লক্ষ টাকার কাজে খুব অনিয়ম ও নি¤œমানের কার্পেটিং এর অভিযোগ তোলে স্থানীয় জনগণ। পরে সরেজমিনে উপজেলা চেয়ারম্যানের আন্তরিকতায় বাধ্য হয় পুনরায় কাজটি সম্পন্ন করতে।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে এক বছর ধরে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন বোয়ালখালীর পিআইও মাসেদুর রহমান।
অপর দিকে বিগত ২০১৬ সালের ৯মে ৪৯০তম কনিষ্ঠ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও দীর্ঘ দুই বছর ধরেই একাধিক পদ শুন্য রয়েছে। যেমন সাংগঠনিক কাঠামো আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (চলমান রয়েছে),আনসার ও ভিডিপি ,গ্রাম পুলিশ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ,পরিবার পরিকল্পনা অফিস,উপজেলা কৃষি অফিস, মৎস্য অফিস, প্রাণী সম্পদ অফিস, খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস, সাব রেজিস্ট্রার অফিস, প্রকৌশল ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, প্রকৌশলী অফিস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক অফিস, মহিলা বিষয়ক অফিস, যুব উন্নয়ন অফিস, সমবায় অফিস, সমাজসেবা অফিস, বিআরডিবি ও শিক্ষা অফিস, রিসোর্স সেন্টার, পরিসংখ্যান অফিস, হিসাব রক্ষণ অফিসসহ একাধিক পদ শুন্য থাকলেও জেলা প্রশাসক অফিসের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন কমপ্লেক্স তৈরীর সাথে সাথেই এসব শুন্য পদ পুরণ করা হবে।
উপজলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আব্দু শুক্কুর বলেন, “বর্তমানে স্থায়ী পিআইও না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পিআইও দিয়ে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সরকারি উন্নয়ন কাজ তদারকি করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে”।
কেননা সপ্তাহে মাত্র ২ দিন অফিস করেন তিনি। যার কারণে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান বিভিন্ন জরুরী কাজ কর্মে এবং সময় মতো প্রকল্প কর্মকর্তাকে চোখে দেখেন না বলে জানা যায়।
ফলে ৫টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের ও দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে। উন্নয়ন কাজ তড়িৎ গতিতে বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পিআইও নিয়োগের দাবি জানাচ্ছে জনগণ।
কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফারুক চৌধুরী বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইঞ্জিনিয়ার ও পিআইও খুব বেশি প্রয়োজন। অতিরিক্ত দায়িত্বের পিআইও দিয়ে সরকারি উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করতেই অনেক কষ্ট। প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। যদিও উন্নয়ন কর্মকান্ড অনেকাংশেই নির্ভর করে স্থানীয় সরকার তথা ইঞ্জিনিয়ারদের উপর”।
জুলধা ইউনিয়নের ডাঙ্গাচর এলাকার সিরাজুল ইসলাম হৃদয় জানান, “প্রায় সব ইউনিয়নের ভেতরের রাস্তা গুলো এখনো কাচাঁ। সামনে নির্বাচন,সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। কিন্তু দৈনন্দিন দাপ্তরিক কাজ সামলাতে এক উপজেলায় এক পিআইওর যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে এক পিআইও চালাচ্ছেন দুই উপজেলা”।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাসেদুর রহমান বলেন, “শীঘ্রই শুন্য পদগুলোতে পিআইও নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে চলেছে বলে জানা গেছে। জেলা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আমি কর্ণফুলীতে প্রকল্প পরিদর্শন ও ৫টি ইউনিয়নের কাজ তদারকি করছি। যদিও আমারও কষ্ট তবে উপরের নির্দেশ মানতে হচ্ছে”।
তথ্যমতে, সারা দেশে ১৫০ জনের মতো পিআইও পদ শুন্য রয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদে নিয়োগের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা থাকায় বিপাকে রয়েছে সরকার। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলেও জানা যায়।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যার্নাজী বলেন,“সব উপজেলায় পিআইও নেই। আমাদের এখানে স্থায়ী একজন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে”।