নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় দীর্ঘদিনের পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে জালাল উদ্দিন নামে এক ইউপি সদস্যের সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছে হানিফ নামে এক পাওনাদার।
হামলাকারীদের চাপাতির কোপে গুরুতর জখম হয়ে তিনি এখন ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মাথায় ও মুখে ৪৪টি সেলাই দেয়া হয়েছে।
এছাড়া এ হামলায় আহত হয়েছে হানিফের পরিবারের আরও তিন সদস্য। ভাঙচুর করা হয়েছে হানিফের ঘরে থাকা লক্ষাধিক টাকার মালামালও।
শনিবার সকালে উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ভিরিন্দা গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নেতৃত্ব দেয়া অভিযুক্ত জালাল উদ্দিন ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর গ্রামের ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য। এছাড়া তিনি ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
আহত হানিফ মিয়া ওই ইউনিয়নের ভিরিন্দা গ্রামের মৃত হজরত আলীর ছেলে।
আহত হানিফ মিয়ার বড় ভাই নবিউল্লাহ জানান, ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন ইটভাটার ব্যবসা করেন। সেই সুবাদে তিনি এলাকার বিভিন্ন জমির মালিকদের কাছ থেকে ভাটার জন্য মাটি কিনে থাকেন। গত ৬ মাস পূর্বে ছোট ভাই হানিফ তার ভাটায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাটি বিক্রি করেছিল। জালাল মেম্বার মাটি বিক্রির ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ২ লাখ টাকা আর পরিশোধ করেনি। দীর্ঘদিন ধরে টাকা চাইলেও তিনি টাকা না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখাতেন।
তিনি জানান, গত শনিবার বাড়ির পাশ দিয়ে জালাল মেম্বার রিকশা দিয়ে যাওয়ার পথে হানিফ পাওনা টাকা চাইলে মেম্বার ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি শুরু করে। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে হানিফ বাড়িতে চলে আসলে জালাল মেম্বার ফোন করে তার ২৫-৩০ জন সশস্ত্র লোক এনে তাদের বাড়িতে হামলা করে।
নবিউল্লাহ জানান, হামলাকারীরা ঘরে থাকা ফ্রিজ, টেলিভিশন, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুরে বাধা দিতে গেলে তাদের মধ্যে কয়েকজন আমার বৃদ্ধ মা, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ও আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। এছাড়া হামলাকারীরা হানিফকেও এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে।
তিনি জানান, এ সময় মেম্বার দাঁড়িয়ে থেকে হানিফকে একেবারে মেরে ফেলার হুমুক দেয় এবং আমাদের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলে। এলোপাতাড়ি মার খেয়ে হানিফ দৌড়ে ঘর থেকে বের হলে তারা আবারও তাকে ধাওয়া করে বাড়ির পাশে একটি রাস্তায় ফেলে তার মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে একপর্যায়ে আমাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে এলে হামলাকারী ও মেম্বার চলে যায়।
আহত হানিফের মেঝ ভাইয়ের স্ত্রী রেহেনা বেগম বলেন, হামলার সময় জালাল মেম্বারের পায়ে ধরে মারধর বন্ধ করতে অনুরোধ করলে তিনি আমাকে হামলাকারীদের দিয়ে ধর্ষণের হুমকি দেয় এবং আমাকে সজোরে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এত বড় ঘটনা ঘটিয়ে তিনি এখন উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে যে আমরা নাকি মেম্বারের শরীরে আঘাত করেছি। ঘটনার পর থেকে তিনি সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে যেন এ বিষয়ে কোথাও কোনো অভিযোগ না দেই।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, হানিফ মাটি বিক্রির কিছু টাকা পাওনা রয়েছে। তাকে সময়মতো পরিশোধ করব বলেও জানিয়েছি। ঘটনার দিন হানিফ প্রথমে আমার ওপর আঘাত করে। পরে বিষয়টি আমার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত গ্রামবাসী হানিফের বাড়িতে হামলা করে।
হামলার সময় নিজের উপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি একজন প্যানেল চেয়ারম্যান আমার শরীরে সে আঘাত করেছে তাকে তো তখনই মেরে ফেলতাম।
এসব বিষয়ে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই জানান, শুনেছি পাওনাদার হানিফ প্রথমে মেম্বারের শরীরে আঘাত করেছে। তবে মেম্বারের নেতৃত্বে পরের যেই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
পলাশ থানার ওসি মকবুল হোসেন মোল্লা বলেন, বাড়িঘরে হামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ইউপি সদস্যের ওপর হামলার বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। বাড়িঘরে হামলা ও আহতের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে তাও নেয়া হবে। উভয় অভিযোগের বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এখানে কমেন্ট করুন: