মো: শফিকুল ইসলাম মতি নরসিংদী :

কারাগারে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা আমাদের দেশে এক রকম ‘ওপেন সিক্রেট’। নরসিংদীতে অবস্থিত জেলা কারাগার থেকে শুরু করে দেশের এমন কোনো কারাগার নেই যেখানে অনিয়ম হয় না। সেই ধারাবাহিকতায় এবার উঠে এসেছে নরসিংদী জেলা কারাগারের অনিয়মের চিত্র। সেখানে নাকি ঘুষ দিলেই মেলে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা। অপরাধীদের দোষ প্রমাণ হওয়ার পর শাস্তি নিশ্চিতে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। অথচ দেখা যায় সেখানে শাস্তির বিপরীতে তারা ঘুষ দিয়ে ব্যাপক আয়েশী জীবনযাপন করে। একজন অপরাধী যদি শাস্তির স্থলে ‘শান্তি’তে থাকে, তবে এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।

অভিযোগে জানা যায়, নরসিংদী জেলা কারাগারে বন্দি এবং দর্শনার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। একটি বিশেষ চক্র এই বাণিজ্য করে চলেছে। আর এরই বিনিময়ে বন্দিদের দেওয়া হচ্ছে প্রায় সব রকমের সুযোগ-সুবিধা। বলতে দ্বিধা নেই, কারাগার সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই এমনটি হচ্ছে। এছাড়া, দালালদেরও দৌরাত্ম্য রয়েছে।

কারাগারের অভ্যন্তরে শাস্তি ভোগকারীরা কতিপয় অসাধু-দুর্নীতিগ্রস্তদের সহায়তায় সেখানে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে। অথচ সবকিছু জেনেও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্নীতির খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মানে, জেনে-বুঝে করেও ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাচ্ছে’ তারা। বেশির ভাগ কারাগারেই দুর্নীতি অনিয়মের চিত্র দেখা যায়। নিয়মের বাইরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না দিলে দর্শনার্থীর অনেকেই তাদের স্বজন-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারে না। আর ভেতরেও টাকা না দিলে মেলে না প্রাপ্য সুবিধা।

এভাবেই চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও যে এ জাতীয় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তা বলাই বাহুল্য। সরকারি বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত আয়ের লক্ষ্যে দুর্নীতিপরায়ণ হচ্ছে দিন দিন। বিষয়টি সার্বিক দিক থেকেই দেশের জন্য নেতিবাচক। আমরা বলতে চাই, কারাগারে শাস্তি ভোগকারীদের কোনোভাবেই ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান করা যাবে না। দর্শনার্থীদেরও নিয়ম অনুযায়ী তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে এ জাতীয় দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও সাবধান করতে হবে। যদি তা বন্ধ না হয় প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিলম্ব না করে সরকারি মন্ত্রণালয়সহ সংশিষ্ট ওপর মহল বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে, এটাই প্রত্যাশা

এখানে কমেন্ট করুন: