প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ৬:৪৬ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১৪, ২০১৯, ৫:৩৪ এ.এম
নরসিংদী জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে ভৈরব-কটিয়াদি নৌপথ ড্রেজিং বন্ধ
নরসিংদী জেলা প্রশাসকের সমন্বয়হীনতায় বন্ধ রয়েছে ভৈরব-কটিয়াদি নৌপথ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথে পুরাতন ব্রাহ্মপুত্র ও আড়িয়াল খাঁ নদের ড্রেজিং কাজ শুরু করা হয় ২০১৭ সালে।
বর্তমান পর্যন্ত (তিন মাস আগে) ৬০ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে কোন কারণ ছাড়াই নরসিংদী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে নৌপথ শুকিয়ে যাচ্ছে। নৌযান চলাচলের পথও বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া নদী খনন এলাকায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করা হয় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে। তাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘ ৩ মাস যাবত নদী খনন কাজ বন্ধ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
ভৈরব-কটিয়াদি নৌপথ ড্রেজিং উদ্বোধন এর দৃশ্য। ছবি : সংগৃহীত
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী বেলাবো ও মনোহরদী উপজেলার ভৈরব-কটিয়াদী রুটে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সীমানা নির্ধারণ করে নদী খনন করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন বাজার, রাধাখালী ও বিন্নবাইদে সীমানা নির্ধারণ না করে দেয়ার ড্রেজিং কাজ বন্ধ রয়েছে।
গত ১৫ জানুয়ারি থেকে নদী খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। তাই সদস্যাযুক্ত এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে দ্রুত নদী খননের কাজ শুরু করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম বলেন, ‘নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে খাস জমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে নদী খনন করতে স্থানীয়রা বাধা দিচ্ছেন। কারণ নদীর খাস জমিতে এখন অনেকেই চাষাবাদ করছেন। তাই বিষয়টি সমাধানের জন্য নরসিংদী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মিটিং করা হয়েছে। তবে আশানুরূপ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি’।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের এর সঙ্গে কয়েক দফায় মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিদে হবে। নইলে মড়া নদীতে রূপ নেবে।ছবি : সংগৃহীত
পরে এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুষমা সুলতানা বলেন, ‘নৌ-রুটের খনন কাজ নিয়ে ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র সঙ্গে মিটিং হয়েছে। নদী খনন কাজ বন্ধ নয়। আগে থেকেই চলমান ছিল। তবে কোন পদ্ধতিতে নদী খনন কাজ করলে ভালো হয় সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণের জন্য নৌমন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাই আপাতত ড্রেজিং কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে’।
বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফার ২৪টি নৌপথের মধ্যে ৯টি রুটের খনন কাজ শেষ হয়েছে। এগুলো হলো-বরিশাল-ঝালকাঠি-বরগুনার পাথর ঘাট, ভৈরব বাজার-লিপসা-ছাতক-সিলেট, মংলা-ঘাষিয়াখালী, খুলনা-গাজীরহাট-বরদিয়া-মানিকদা, দিলালপুর-ঘোড়াডিঙ্গা-চামড়াঘাট-নিকলি-আটপাড়া-নেত্রোকোনা, ঢাকার মিরপুর-সাভার নৌপথ ও সৈয়দপুর-বান্দুরা নৌপথ, কক্সবাজার-সেন্টমাটিন, ভৈরর (নরসিংদী)-কটিয়াদী ও শ্রীপুর-ভোলা খোয়াঘাট-গংগাপুর নৌপথ খনন কাজ শেষ হয়েছে।
নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে এনে দেশের আবহমান ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারসহ সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর জন্য নেয়া হয়েছে ৫৩টি নৌপথ খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পে মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া-টেকেরহাট গোপালগঞ্জ নৌপথ খনন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদীর মাদারীপুর হতে মোস্তফাপুর পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার, চরমুগুরিয়া থেকে ওআইসি পলি পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার, লোয়ার কুমার নদীর মোস্তফাপুর হতে টেকেরহাট প্রায় ১৮ কিলোমিটার এবং মধুমতি নদীর টেকেরহাট হতে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কিলোমিটার অর্থাৎ প্রায় ৬৫ কিলোমিটার নৌপথের ড্রেজার দ্বারা ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এসব প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুরের রূপরাইয়া এলাকায় নদী খননের পলি মাটি লক্ষীগঞ্জ, রূপরাইয়া নামক বাওরে ফেলার ফলে বাওরের প্রায় ৭৫-৮০ একর অনাবাদি জমিকে আবাদি জমিতে রূপান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া মাদারীপুর-চরমুগুরিয়া, টেকেরহাট ও গোপালগঞ্জ নৌ-পথের আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা রক্ষা, বোরো সেচের উপযুক্ত পরিবেশ ও ৮ ফুট ড্রাফটের নৌ চলাচল উপযোগী করা হয়েছে।
Copyright © 2024 নিউজ সময়.কম. All rights reserved.