চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
সরকারের কাবিটা প্রকল্পে হরিলুট! সড়ক বাতি ও সোলার প্যানেল স্থাপনে অনিয়ম আর দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে! চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে তিন দফায় লাগানো হয়েছে স্ট্রিট লাইট (সড়ক বাতি) ও সোলার প্যানেল।
সূূত্রে মতে, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৮-১৯ অর্থ বছরের (কাবিটা) ১ম পযার্য়ে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সোলার সিস্টেম প্রকল্পে (মসজিদ, মাদ্রাসা,আশ্রম ও দুস্থ পরিবার সহ) বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৩৫৭টি স্ট্রিট লাইট (যা সড়ক বাতি সৌর বিদ্যুৎ চালিত) ও সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।
এতে ১ম পযার্য়ে গত ডিসেম্বরে এর খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৪৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০৮ টাকা। এই বিশাল অংকের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং বাস্তবায়ন সংস্থা উদ্দীপন এনজিও এবং সাইফ পাওয়ার টেক’র উ পর। কেন না তারা উপজেলা পরিষদকে ম্যানেজ করে নি¤œমানের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার সুযোগ নিয়েছে।
জানা যায়, কয়েক মাস যেতে না যেতেই স্থাপন করা বাতির আলো চলে গেছে। চায়না কোম্পানির কম স্থায়িত্বের লাইট ইমিউটিং ডায়েট (এলইডি) সংযোজন ও কম ওয়াটের সৌর প্যানল স্থাপন করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। ফলে নি¤œমানের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি সংযোজন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংস্থাটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্দীপনের দাবিকৃত সৌর প্যানেলের ২০ বছর ও সড়কবাতির ৫ বছর ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের আগেই সড়ক বাতির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। স্ট্রিট ল্যান্ডে বাতি থাকলেও আলো নেই। ক্ষীণ আলোতে কিছু সময় পর পর মৃদু আলো জ্বলে কিংবা জ্বলেনা। সোলার প্যানেল আছে, পাওয়ারে (শক্তি) নেই। হাস্যকর হলেও উদ্দীপন এনজিও কর্মকর্তারা জানান, অনেক সড়ক বাতি নষ্ট হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়ি ও পিডিবির গাড়ির ধাক্কায়!
অনেকের দাবি, ওই বিশাল অংকের টাকার সঠিক ব্যবহার হলে সড়ক বাতি ও সোলার প্যানেল গুলোর এই বেহাল অবস্থা হতো না। বাতি ও নষ্ট হতো না। যদিও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা এ প্রকল্পে কাজটি করার নির্দেশনা থাকলেও এটি করা হয়েছে অনভিজ্ঞ উদ্দীপন এনজিও’র নিজস্ব লোক দ্বারা। যাদের কোন প্রশিক্ষিত জনবল নেই।
তথ্য পাওয়া যায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পটিয়ার অধীনে সহ কর্ণফুলীতে তিন কিস্তিতে আনু: ২৪১ টি সড়ক বাতি ও ব্যাটারী চালিত সোলার প্যানেল মিলে অন্যান্য ১১৬টি প্যানেল স্থাপন করেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এ বরাদ্দের একটি অংশ ৭% কমিশন হারে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক উপজেলা নেতাকে দিতে হয়েছে। অনেকটা কৌশলে তিনি তা দখলে নিয়েছেন। এর ফলে নি¤œমানের কাজ করার সুযোগ নিয়েছে এনজিও সংস্থা উদ্দীপন।
উপজেলায় কর্মরত উদ্দীপন সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর্ণফুলীতে ৬৬টি সোলার স্ট্রীট লাইট (সড়ক বাতি) ও ১৮টি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৮৫ ওয়াট প্যানেলে ২০ ওয়াট এলইডি বাতি ৩টি ও ৬০ ওয়াট প্যানেলে ৬৩ টি ১৫ ওয়াটের এলইডি বাতি সংযুক্ত করেছে। স্ট্রীট লাইট স্থাপনে স্টিলের খুঁটির পরিবর্তে রং করা লোহার খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর্ণফুলীতে বাস্তবায়নযোগ্য এ সোলার প্যানেল প্রকল্পে চায়না কোম্পানীর এককটি (স্ট্রিট লাইট) ৮৫/৬০ ওয়াটের সড়ক বাতির দর দেখানো হয়েছে ৭৭ হাজার ৪২০ টাকা হতে ৫৬ হাজার ৪৯০ টাকা এবং ৬০ ওয়াটের সোলার প্যানেলের দর দেখানো হয়েছে ৬৫ হাজার ৩৮০টাকা হতে ১১হাজার ৬০ টাকা।
কর্ণফুলীতে লাগানো এসব কম ওয়াটের প্যানেলের দরদাম আকাশচুম্বী হলেও অনেকে আবার মন্তব্য করেছেন দূর্যোগ মন্ত্রনালয় দরটি নির্ধারণ করেছে। বাস্তবায়ন সংস্থা উদ্দীপন এনজিও ও সাইফ পাওয়ার টেক সে অনুযায়ী মাঠে সড়ক বাতি, খুঁটি ও সোলার প্যানেল সরবরাহ না করে কম দামে কেনা নি¤œমানের বাতি ও প্যানেল স্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানায় স্থানীয় জনগণ।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানায়, যেখানে অন্য জায়গায় ডেনমার্কের তৈরি ১৫০ ওয়াটের প্রতি সেট বাতি কিনছে ৪৭ হাজার টাকায় ও ১২০ ওয়াটের বাতির সেট কিনছে ৪৩ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ৮০ ওয়াট বাতি কিনছে ৪১ হাজার ৫০০ টাকায়, সেখানে কর্ণফুলীতে লাগানো ৬০ ওয়াটের প্যানেলে সৌরবিদ্যুতে চালিত ১৫ ওয়াটের বাতির দাম ৫৬ হাজার ৪৯০টাকা । তাহলে দামের ক্ষেত্রে তারতম্য ঘটছে ১২ হাজার ৯৯০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি। আর অন্য বাতির গ্যারান্টি ২০ বছরের হলেও কর্ণফুলীতে বসানো বাতির গ্যারান্টি মাত্র ৫বছরের?
জানা যায়, সরকারের এ প্রকল্পে উদ্দেশ্য ছিল, বিদ্যুতের উপর চাপ কমানো এবং গ্রামের মানুষের জীবন ও মানোন্নয়ন। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতের সাশ্রয় রেখে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলো আলোকউজ্জল রাখা। পথচারীরা যাতে পথ দেখে রাস্তা পারাপারের প্রস্তুতি নিতে পারেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি এত টাকার শ্রাদ্ধ ব্যয় করে এসব স্থাপনের ফলে উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে কী? না লাভবান হচ্ছে গুটিকয়েক সুবিধাভোগী।
এলাকাবাসীর পক্ষে সৈন্যেরটেকের শাহাজাহান, ওমর ফারুক বিজয় ও চরপাথরঘাটার সাইফুদ্দীন সহ কয়েকজন জানায়, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের সড়ক সংযোগ স্থলের বাদামতল, নয়াপাড়া, সৈন্যরেটেক পুলের মনি গোষ্ঠির বাড়ির সামনে, মোহছেন আলি পাড়া ও মাদ্রাসা পাড়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মেঁঠোপথে আরো কিছু উন্নত মানের স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা জরুরী ছিল কিন্তু এ প্রকল্পে তা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে সত্যতা স্বীকার করে উদ্দীপন সোলার প্রজেক্টের হেড মো. আলী সরকার বলেন, যে টাকাটা নেওয়া হয়েছে ওটা ওভাবে না। সাবেক ইউএনও যিনি ইউনিয়ন পরিষদে বসতেন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নতুন উপজেলা অবকাঠামো উন্নয়নে অংশীদার হতে। ওদের অডিট সেইভ, ইন্টারনাল এক্সর্টানাল কিছু বিষয় আছে যার জন্য টাকাটা কেটে নিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রনালয় হতে সড়ক বাতি ও প্যানেল স্থাপনের অনুমোদিত ডিলার ছিল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড ( আইডিসিওল)। এর পক্ষে সৌর বিদ্যুৎ কর্মসূচির সহযোগি হিসেবে কর্ণফুলী উপজেলায় কাজ করছে উদ্দীপন গ্রীণ এনার্জি প্রজেক্ট। উদ্দীপন নামক এনজিও সংস্থা। এর পূর্বে কাজ করেছে সাইফ পাওয়ার টেক।
চুক্তি রয়েছে মূল বরাদ্দের ১০% অর্থ তিন বছরের জন্য (সার্ভিস বাবদ ) উপজেলায় জমা থাকবে। যেকোন সময় সড়ক বাতি খারাপ বা নষ্ট হলে পুনরায় ঠিক করে দেবেন তাঁরা।