মো: শফিকুল ইসলাম: নরসিংদী জেলায় বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকেন না চিকিৎসক, অফিস চলাকালীন বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন তারা। এমনকি হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরবরাহ না করা ও হাসপাতালের খাবারের নিম্নমানসহ নানান অভিযোগ ও অনিয়মে ভরপুর নরসিংদীর বিভিন্ন সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদী জেলা ও সদর সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক থাকলেও তাদের অবহেলায় ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা।
নরসিংদী জেলায় প্রায় সাড়ে ২৫ লাখসহ পার্শ্ববর্তী জেলা কাপাশিয়া, কিশোরগঞ্জ, বিবাড়িয়ার লোকজন নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক্স-রে মেশিন, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। ফলে বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য হন রোগীরা। এমনকি বাইরের ডায়গনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
নরসিংদী করিম পুর এলাকার রোগী জুলেখা বলেন, তিন দিন ধরে এখানে ভর্তি রয়েছি। এরমধ্যে মাত্র একবার ডাক্তারের দেখা পেয়েছি।
এছাড়া রোগী হালিমা বলেন, পিত্তথলির রোগ নিয়ে এখানে ভর্তি আছি। ডাক্তার আসার পরই চলে যেতে বলেছেন। আমার মতো গরিব রোগী কি আর ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারে?
রোগীদের অভিযোগে জানা যায়, হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও তা করা হয় না। কর্তব্যরত নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের যোগসাজসে রোগীদেরকে দিয়ে কৌশলে ওষুধ কেনানো হয়। এছাড়া জরুরি বিভাগে যেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা সেখানে ব্রাদার বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাই জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আর চিকিৎসক থাকেন বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে ও প্রাইভেট হাসপাতালে। কোনো গুরুতর রোগী এলে ফোন দিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারদের ডেকে আনেন কর্মচারীরা। নরসিংদী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ডিউটির সময় হাসপাতালের বাইরে গিয়ে রোগী দেখার অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নরসিংদী জেলায় যতগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে প্রত্যেক হাসপাতালের একজন বা দুজন করে প্রতিনিধি ডাক্তারের চেম্বারের সামনে ঘুরাঘুরি করেন। তারা ডাক্তারদের বিভিন্ন ধরনের অফার দিয়ে রোগীদের তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠাতে বলেন। অভিযোগ রয়েছে প্রত্যেক ডাক্তার তাদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালে চুক্তিবদ্ধ থাকেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নরসিংদী জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দালালমুক্ত করার জন্য স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন। দুই একজন ডাক্তার যে চরম অনিয়ম করেন সেটা সত্য। হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।