কুমিল্লায় ১১ বছরের এক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মোঃ সোহেল (২৪) নামে এক ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। ওই শিশুর মাকেও ধর্ষকের প্রবাসী বড়ভাই ধর্ষণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) নাফিজ আহমেদ একদল পুলিশ নিয়ে উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রাম থেকে তাকে প্রেফতারপূর্বক থানায় নিয়ে আসে। ধর্ষক মোঃ সোহেল মোহাম্মদপুর (ডাবপার) গ্রামের সাফিকুল ইসলামের পুত্র, পেশায় সে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক।পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মোহাম্মদপুর (ডাবপার) গ্রামের সাফিকুল ইসলামের পুত্র মেঃ সোহেল ভিক্টিম শিশুটিকে হত্যার হুমকি ও নানাভাবে ভীতিপ্রদর্শনে প্রায় দেড় বছর ধরে নিয়মিত ধর্ষণ করে আসছে।
ধর্ষকের সাথে ভিক্টিমের সম্পর্ক আপন চাচাতো ভাই-বোন। ভিক্টিমের পরিবারে মা ও ছোট এক ভাই রয়েছে। প্রায় ৭ বছর পূর্বে তার মানসিক প্রতিবন্ধী পিতা নিখোঁজ হন।পিতার অবর্তমানে মা ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালিয়ে আসছেন। ধর্ষিতা শিশুটি মোহাম্মদপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন। তার ভাই (৭) ও একই মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়েন।স্থানীয়রা আরও জানান, ধর্ষক সোহেল পরকিয়া প্রেমের টানে পাশ্ববর্তী মুরাদনগর উপজেলার লক্ষিপুর (দারোরা) গ্রামের ৬ সন্তানের জননী নূরজাহান (৫০) কে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন।বিয়ের পর তার স্ত্রী সৌদি আরবে চলে যান। প্রায় দেড় বছর কর্মজীবন শেষ করে গত ৭ মাস পূর্বে দেশে আসেন। আসার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলতে থাকে। এবং তার স্ত্রীর সাথে আগামী ২৫ জুন ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত হয়।
গত রবিবারও ধর্ষণের শিকার হলে ভিক্টিম ধর্ষকের স্ত্রী নূরজাহানকে বিষয়টি অবগত করেন। এনিয়ে নূরজাহান বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ সমাজপতিদের অবগত করে।সমাজের একটি অংশ ভিক্টিমের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মিমাংশার প্রস্তাবে কিছু শর্ত জুড়ে দেন। ধর্ষক সোহেল ওই শর্ত মানতে রাজি না হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ দিয়ে আটক করে পুলিশে সোপার্দ করেন।ভিক্টিমের মা জানান, প্রায় দেড় বছর পূর্বে আমার মেয়ের কান্নাকাটির শব্দে সোহেলের ঘরে গিয়ে দেখি মেয়েকে নির্যাতন করেছে। তার আর্তচিৎকারে বাড়ির লোকজনও জড়ো হয়ে যায়।বিষয়টি গোপর রাখার জন্য মেয়েকে বলি কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি তোর ভাই মেরেছে, তাই কান্না করেছি। কারণ আমার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামীর অনুপস্থিতিতে আমার ভাসুরের ছেলে মানে ধর্ষক সোহেল’র বড় ভাই বর্তমানে সৌদী প্রবাসী সামসুদ্দিন কর্তৃক আমিও ধর্ষণের শিকার হই।বিষয়টি আমার ভাসুর সফিকুল ইসলাম ও জা’ রাবেয়া বেগমের নিকট বিচার চাওয়ায় আমাকে অমানবিকভাবে শারীরিক নির্যাতন এবং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল।
সে কারণে মাথাগুঁজার ঠাইটি হারানোর ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখি। আজ তার স্ত্রীই প্রকাশ করেছে। তবে ভিক্টিম শিশুটি জানায়, আমার মা’ প্রায়ই ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যবাড়িতে কাজ করার কারণে ঘর খালি থাকত।সোহেল ভাই আমাকে ও আমার মা’ ভাইকে হত্যার হুমকি এবং বাড়ি ছাড়ার ভয় দেখিয়ে গত দেড় বছর ধরে মাঝে মাঝে নির্যাতন করত। তখন আমার ভাবী (সোহেলের স্ত্রী নূরজাহান) সৌদী আরব ছিল।গত রোজার ঈদের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই নির্যাতন করত। প্রতিবারই আমাকে ২০ টাকা করে দিত। আমি নির্যাতন সইতে না পেরে ভাবী (সোহেল’র স্ত্রী নূরজাহান)কে বিষয়টি জানাই।ধর্ষক মোঃ সোহেল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং ঘটনাটি প্রকাশে তার স্ত্রীকে দায়ি করে বলেন, তার সাথে আমার আগামি ২৫ জুন ডিভোর্স হওয়ার কথা ছিল।
এলাহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকার, ১নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল হাসেম সরকার ও ২নং ওয়ার্ড মেম্বার মজিবুর রহমান ভিক্টিম ও তার পরিবার সহ ধর্ষককে জ্ঞিাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে দাবি করে বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় আসল সত্য বেড়িয়ে আসবে। তারা ধর্ষকের উপযুক্ত বিচারও দাবি করেন।এব্যাপারে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) নাফিজ আহমেদ জানান, ধর্ষক এবং ভিক্টিমকে থানায় নিয়ে এসেছি। সাথে ভিক্টিমের মা ও নানী রয়েছে। ভিক্টিমের মা বাদী হয়ে মোঃ সোহেলকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।অভিযুক্ত সোহেল ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে। বুধবার(১৯ জুন) সকালে আসামি সোহেলকে কোর্ট হাজতে চালান করা হবে এবং ভিক্টিমকে ডাক্তারী পরীক্ষা ও ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে বলেও তিনি জানান।