নরসিংদীতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে জেলা ছাত্রদলের কার্যক্রম। দলটির একাধিক সদস্য যুবদল-সেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটিতে পদায়ন হওয়া ছাত্রদলের কর্মকান্ডে ভাটা পড়েছে। তাই কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছেন না জেলা ছাত্রদল। ফলে

একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে, জেলা ছাত্রদলের কর্মকান্ডে নেমে এসেছে শিথিলতা। এর প্রভাব পড়ছে জেলা উপজেলা তথা কেন্দ্রীয় বিএনপিতে। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ঢাকা-সিলেট লং মার্চে নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের অনুপুস্থিতিতে বড় ধরনের বিপত্তির সৃষ্টি হয়। সিলেট যাওয়ার সময় খালেদা জিয়ার গাড়ী বহরে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে স্থানীয় যুবলীগ নেত্রীবৃন্দ। এক পর্যায়ে যুবলীগ কমীরা গাড়ী বহরে সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ জুতা নিক্ষেপ করা হয়।
স্থানীয় বিএনপির রাজনিতিকদের অভিমত, দলের চেয়ারপার্সন যাওয়ার সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর অংশে ছাত্রদলের সরব উপস্থিতি থাকলে এরুপ ঘটনার আর্বিভাব হত না। তাই নানা প্রতিকুলতার পরও খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আন্দোলন সংগ্রামকে চাঙ্গা করতে জেলা ছাত্রদলকে ডেলে সাজানোর চিন্তা করছেন হাইকমান্ড।

জেলা ছাত্রদল সূত্রে জানাযায়, ২০১০ সালের ১২ই মার্চ নজরুল ইসলাম ভূইয়াকে সভাপতি ও আব্দুর রউফ ফকির রনিকে সাধারন সম্পাদক করে ১৬ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। ২০১১ সালে ৫ই আগষ্ট ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা ছাত্রদলের পূনাঙ্গ কমিঠি গঠন করা হয়। শুরুর কয়েক বছর ছাত্রদলের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো থাকলেও বর্তমানে ভাটা পড়েছে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংঘঠনের মেয়াদ দুই বছর থাকলেও এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে ৮ বছর। এরই মধ্যে ছাত্রদলের সভাপতি সাধারন সম্পাদক সহ উল্লেখযোগ্য পদের প্রায় ৩০ সদস্যই বিবাহিত। তাদের নেই কোন ছাত্রত্ব। তাছাড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বের পাশাপাশি ঢাকা বিভাগীয় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাংগঠনিক পদে রয়েছেন নজরুল ইসলাম ভূইয়া।

ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহরিয়ার সামস্ কেনেডি নব্য গঠিত জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া একাধিক ছাত্রদল নেতা জেলা,থানা ও শহর যুবদলের পদায়িত হয়েছেন। একজন নেতা একাধিক সংঘঠনে যুক্ত হওয়ায় ছাত্রদলের কর্মকান্ড ব্যহত হচ্ছে। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে সংকট তৈরী হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতি ছাত্রদলকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর সিদান্ত নিয়েছেন দলের নিতিনির্ধারকরা।

তাই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছাস ও চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। দৌড়-ঝাঁপের পাশাপাশি লবিং তদবির শুরু করেছেন পদ প্রত্যাশীরা। সভাপতি পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক আব্দুর রউফ ফকির রনি। রয়েছেন দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে সম্মুখ ভাগের নেতা সাবেক এজিএস সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ। দলীয় কর্মকান্ড বাস্তবায়নের কারনে ৯টি মামলায় সে একাধিক বার জেলখাটেন। রাজনিতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সাদা পোশাকধারী বাহিনি সদস্যদের হাতে সাড়ে আট মাস গুম থেকেছেন। শিকার হয়েছেন নানা নির্যাতনের।

সাধারন সম্পদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের বাস্তবায়নের অপর নায়ক মাঈনউদ্দিন ভূইয়া। কলেজ শাখা ছাত্র দলের আহবায়ক ফয়সাল মুন্না। ছাত্র নেতা নূরে আলম উপল। এছাড়া একাধিক পদ প্রত্যাশী থাকলেও তাদের মধ্যে তোরজোর কম দেখা যাচ্ছে।

ছাত্রদলের নেতৃত্ব নিয়মিত ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার তারেক রহমান সিদান্তকে সাধুাবাধ জানিয়েছেন জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা জিএস মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ। তিনি বলেন,অনিয়মিত,বিবাহিত,অছাত্র ও ব্যাবসায়ীদের দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা কি সম্ভব? তাই দলীয় কর্মসূচি চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত ছাত্রদের হাতেই ছাত্র নেতৃত্ব তুলে দেয়া উচিত। তাছাড়া প্রায় ৮ বছর যাবৎ এক কমিটি দিয়েই জেলা ছাত্রদলের কর্মাকান্ড চলছে। এতে নতুন নেতৃত্ব তৈরীতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রার্থী আব্দুর রউফ ফকির রনি বলেন, দল করতে গিয়ে শুধু আমি একা ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। আমার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আব্বাকে চাঁদা বাজির মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ বাড়ি ঘরে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছেন। গত তিন বছর যাবৎ রাজনৈতিক মামলায় ফেরারী। তারপরও দলীয় কর্মসূচি সফল করেছি।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ বলেন, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম তুঙ্গে তুলার অপরাধে আইন শৃংখলা বাহিনির সদস্যরা আমাকে প্রায় সাড়ে আট মাস গুম করে রেখেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি সহ দলীয় কর্মসূচি বাস্তাবায়ন করতে গিয়ে কয়েক ডজন মামলা খেয়েছি। জেল খেটেছি। নিতিনিধারকরা আমার ত্যাগ ও যোগত্যা সহ সব কিছু বিবেচনা করে মূলায়ন করবে এটা আমার বিশ্বাস।

সাধারন সম্পাদক পদ প্রার্থী মাঈনউদ্দিন ভূইয়া বলেন, এক কমিটিতেই চলছে ৮ বছর। এই কমিটি যদি পুনরায় নবায়ন করা হয়। তাহলে আমদের মতো নিয়মিত ছাত্র নেতাদের ভবিষৎ কি?

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক আকমুল হাসান মিন্টু বলেন, একটা মেশিন যখন পুরোনো হয়। তখন প্রডাক্টটিটিভি নষ্ট হয়ে যায়। তেমনি কেউ যদি দীর্ঘদিন একটি সংঘঠনের দায়িত্ব থাকে, তাহলে সংঘঠনের গতিশিলতা কমে যায়। সেই জন্যই আমার সারা বাংলাদেশে ছাত্রদলকে নতুন আঙ্গিকে সাজাচ্ছি। ইতিমধ্যেই ৫২টি জেলা সম্পূর্ন হয়েছে। বাকি গুলো সম্পর্ন করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এখানে কমেন্ট করুন: