ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শৈলকুপা উপজেলার এলাকা-৭ এর পরিচালক নুরুজ্জামান ঘুষের এক লাখ ৩৮ হাজার এক শ’ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হলেন। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে এ টাকা ঘুষ হিসেবে এলাকাবাসীর কাছ থেকে নিয়েছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার হাকিমপুর ই্উনিয়নের খুলুমবাড়িয়া গ্রামের পৃথক দুইটি স্থানে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়া হয়। সারিবদ্ধ ভাবে লাইনে দাড়িয়ে টাকা বুঝে নেন গ্রাহকরা। সে সময় উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো: আলতাফ হোসেন, শৈলকুপা উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কামরুজ্জামান, সমিতি বোর্ডের সভাপতি হাফিজুর রহমান, সহকারি প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন, সহকারি জেনারেল ম্যানেজার (সদস্য সেবা) মো: রেজাউল করিম রাজিব।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো: আলতাফ হোসেন বলেন, শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সুযোগে বুঝে ওই এলাকার এক শ্রেণীর দালাল চক্র বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বেআইনি ভাবে টাকা আদায় করে আসছে। এমন খবরের ভিত্তিতে উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের খুলুমবাড়িয়া গ্রামে গোপন অনুসন্ধানে নামেন তারা।
জেনারেল ম্যানেজার আরো জানান, কয়েক দিনের গোপন অনুসন্ধান কালে খবরের সত্যতা বেরিয়ে আসে। ঘটনার সাথে জড়িতদের মধ্যে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শৈলকুপা ৭ নং এলাকা পরিচালক নুরুজ্জামানের নাম প্রকাশ হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে মোটা টাকা লেনদেন করে আসছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বলে জানান জেনারেল ম্যানেজার।
তিনি আরো জানান, দেড় শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। এ টাকা কৌশলে ঘুষ গ্রহিতার কাছ থেকে আদায় করে গ্রাহকদের ফেরত দেয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। গ্রাহকরা খবর পেয়ে এলাকায় জড়ো হন। লাইনে দাড়িয়ে টাকা ফেরত নেয়ার জন্য অপেক্ষা করেন গ্রামবাসীরা।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ঘুষ গ্রহিতা এলাকা-৭ এর পরিচালক নুরুজ্জামান নিজে গ্রাহকদের হাতে সেই টাকা তুলে দেন। ওই দিন দুর্নীতিবিরোধী ব্যানার ঝুলিয়ে ১২৬ পরিবারকে এক লাখ ৩৮ হাজার এক শ’ ঘুষের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে মর্মে জানান জেনারেল ম্যানেজার।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শৈলকুাপা উপজেলার এলাকা-৭ এর পরিচালক নুরুজ্জামান গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিন বছর আগে খুলুমবাড়িয়া গ্রামের দক্ষিণপাড়া ও বাগদিপাড়ার অন্তত ১৫০ জনের কাছ থেকে মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে গড়ে ৭৫০ টাকা হারে ঘুষ নেন। চলতি বছরে এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারনের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়ে এবং তিনি ফেঁসে গেছেন। নিরুপায় হয়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানান নুরুজ্জামান। অনেকেই পাওনার চেয়ে বেশি দাবি করেছে বলেও জানান তিনি।
আত্মস্বীকৃত এ ঘুষখোর শৈলকুপার হাকিমপুর গ্রামের মৃত নজির উদ্দিন মোল্লার ছেলে। এলাকা পরিচালক হওয়ার আগে তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তালিকাভুক্ত ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।