জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম ব্যুরো:
বিকাশের মাধ্যমে কত মানুষের টাকা যে জলে গেছে তার কোন শেষ নেই।
দিন দিন নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ বের করছে। নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আমেরিকান কোম্পানী মেটলাইফ আলিকোতে চট্টগ্রাম জোনে কর্মরত এক শিক্ষিত যুবক মঞ্জু হক তেমনিই এক বিকাশে অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ১৮ জুলাই বুধবার দুপুর ১২ টার পর। প্রথমে ০১৮৩৩-৮২৮৪৯৬ নং থেকে কল
আসে একটি অপরিচিত নারী কন্ঠে। এবং জানানো হয়, বিকাশ এ্যাপস আপডেট করতে হবে আপনার। তাহলে সেন্ট মানি ফি কম এবং ক্যাশ আউটে ১৮.৫০ পয়সার বদলে ১০ টাকা হবে।
পরক্ষণেই দ্বিতীয় বার কল করে আসে ০১৮৬৭-৯১৫২৯৩ নং থেকে এবং অত্যন্ত কৌশলে সেন্ট মানি করিয়ে পার করে নেন ৪১২২ টাকা (এই নাম্বারে ০১৮৪৬-৬৮৩৬৫০)।
ঘটনার বিস্তারিত (ভুক্তভোগী ও প্রতারক চক্রের রেকর্ডিং শুনুন তাদের নিজস্ব ভাষায়):
প্রথমে বিকাশ করা ফোনে কল তারপর পাশে কে আছে তার নং নিয়ে সেই নাম্বারে কল করে কথোপকথন শুরু--
অপর প্রান্ত থেকে সুরেলা এক নারী কন্ঠে মহিলা আওয়াজ দিয়ে বলেন, আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?
প্রতারণার শিকার গ্রাহক বল্লেন -হা,শুনতে পাচ্ছি।
মহিলা: এখন তো আপনার বিকাশের মোবাইলটা ফ্রি হয়েছে তাইনা?
গ্রাহক: হা।
মহিলা: আপনার বিকাশের মোবাইলটা স্যার নরমাল বাটনের না স্কিন টাচ?
গ্রাহক: স্মার্টফোন।
মহিলা: সরি!
গ্রাহক : পুনরায় জবাব দিলেন স্মার্ট ফোন।
মহিলা: ওহ স্মার্টফোন টাচ মোবাইল তাইনা। ওকে স্যার প্রবলেম নেই আগে কথা বুঝে তারপর কাজটা করবেন। *২৪৭# টিপে কল দেন ওখানে যদি এইট পর্যন্ত ,লিখা থাকলে তাহলে এক্টিভ করে নিতে হবে। আর যদি ৯ পর্যন্ত লিখা থাকে তাহলে এক্টিভ করা আছে। *২৪৭# টিপে কল দেন। দেখেন কত পর্যন্ত ম্যানু আসল?
গ্রাহক : এখানে আট পর্যন্ত আছে।
মহিলা: আট পর্যন্ত আছে তাইনা। আটের নিচে দেখেন একটা দাড়ি নড়াচড়া করছে ওখানে টাচ করেন। করছেন স্যার?
গ্রাহক: করলাম।
মহিলা: এখন ৮*১ ডায়াল করেন। কি লেখা আসলো জানান?
গ্রাহক: এন্টার রিসিভার বিকাশ একাউন্ট নাম্বার।
মহিলা: ৭৭*০১৮৪৬৬৮৩৬৫০*৪১২২ দিয়ে সেন্ট করেন। কি লেখা আসলো আমাকে বলবেন স্যার?
গ্রাহক: রেফারেন্স আসলো।
মহিলা: আবার টাচ করেন। টাচ করেছেন?
গ্রাহক: হা করেছি।
মহিলা: ১*২*পাশাপাশি আপনার গোপন নাম্বার দিয়ে সেন্ট করেন। কোথাও ভুল করবেন না। সেন্ট করেছেন?
গ্রাহক: হা করছি।
মহিলা: জি এখন কি লেখা আসলো বলবেন?
গ্রাহক: জি।
মহিলা: ওখানে কি লেখা আসলো স্যার?
গ্রাহক: সেন্ট মানি ৪১২২।
মহিলা: আমি বলছি ব্যালেন্স ৫ এর নিচে কি লেখা দেখা যাচ্ছে।
গ্রাহক: ব্যালেন্স হচ্ছে ১৭৬।
মহিলা: আপনার ফি টাকার নিচে ব্যালেন্স কত দেখা যাচ্ছে?
গ্রাহক: ৫ এর নিচে--
মহিলা: জি: জি: একদম ৫ এর নিচে কি দেখা যাচ্ছে।
গ্রাহক : ১৭৬.৭৫ টাকা।
মহিলা: ওখানে একটি ভাইরাস মেসেজ গিয়েছে, মেসেজটি দ্রুত ডিলিট করুন।
গ্রাহক: এখনো তো সেন্ট মানি হয়ে গেলো।
মহিলা: জি না। ওটা ৯নং অপশনে যোগ হয়ে গিয়েছে। মেসেজটি দ্রুত ডিলিট করেন।
গ্রাহক: মেসেজটি ডিলিট করব কেন?
মহিলা: মেসেজ টি ডিলিট না করলে আপনার একাউন্ট থেকে ৩২০টাকা করে কেটে নেবে। আর ৯ নয় অপশনটা দেখাবেনা। আপনি মেসেজটি দ্রুত ডিলিট করেন।
গ্রাহক: এখন তো আমার টাকাটা সেন্ট হয়ে গেলো।
মহিলা: জি! না। ওটা আপনার ৯নং অপশনে যোগ হয়ে গেছে স্যার। আপনি মেসেজটি ডিলিট করেন নাহয় অপশনটি দেখাবেনা।
গ্রাহক: আমি মেসেজটি ডিলিট করবো কেন ভাই। আমার ট্রানজেকশন হয়েছে না!!
মহিলা: আমি কি বলছি। মেসেজটি ডিলিট না করলে আপনার একাউন্ট দেখাবেনা এবং ৩২০ টাকা কেটে নেওয়া হবে।
গ্রাহক: এখন তো ৬ নং অপশনও নেই।
মহিলা: আপনি মেসেজটি ডিলিট করেন স্যার।
গ্রাহক: আমার ট্রানজেকশন হয়েছে না? আমার টাকা গুলো চলে গেলো। মেসেজটি ডিলিট করবনা আমি।
মহিলা: আপনার ৯ নং অপশনে যোগ হয়ে গেছে স্যার।
গ্রাহক: ৯নং অপশন আসেনা এখানে।
মহিলা: আপনি মেসেজটি ডিলিট করেন। এখান থেকে আরো সাতটা এসএমএস করা হবে।
গ্রাহক: না আমি মেসেজ ডিলিট করবনা।
মহিলা: আপনি ডিলিট না করলে আপনার একাউন্টটি দেখাবেনা। তখন আমাদের দায় করতে পারবেন না। আপনি মেসেজটি ডিলিট করুন। ভাইরাস মেসেজটি থেকে গেলে ৩২০ টাকা কেটে নেবে স্যার।
গ্রাহক: ৩২০ টাকা আমার থেকে কাটুক। আমি মেসেজ ডিলিট করবনা।
মহিলা: না কাটলে আপনার একাউন্ট দেখাবেনা।
গ্রাহক: না দেখালে দেখাবেনা--এটা কি জন্য করলেন সেটা বলেন।
মহিলা: ৯নং অপশনে যোগ হয়ে গেছে আপনি কথা বুঝেন না কেন?
গ্রাহক: আমার ৯নং অপশনের দরকার নেই।
মহিলা: তাহলে আপনার একাউন্ট দেখাবেনা। মেসেজ যদি ডিলিট না করেন।
গ্রাহক: আরে ভাই আগে আমার একাউন্ট থেকে টাকা গেল কেন সেটা বলেন?
মহিলা: আপনি যদি মেসেজ ডিলিট না করেন তাহলে অপশনটি দেখাবেনা। দ্রুত মেসেজটি ডিলিট করুন।
গ্রাহক: আমার ট্রানজেকশন হয়েছে। মেসেজ দ্রুত ডিলিট করব কেন?
মহিলা: আপনি মেসেজ ডিলিট না করলে একাউন্ট দেখাবেনা।
গ্রাহক: একাউন্ট দেখা যাবেনা সেটা পরের হিসাব।
মহিলা: এখন আপনি মেসেজটি ডিলিট করবেন না?
গ্রাহক: না আমি মেসেজ ডিলিট করবনা।
মহিলা: না করলে আপনি ধুয়ে ধুয়ে পানি খান।
গ্রাহক: এ--(লাইন কেটে দেয়)
মোবাইলে ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করে এভাবে ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক ও এজেন্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকও কোনো সহায়তা করছে না ভুক্তভোগীদের। এতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে জনপ্রিয় হওয়া ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’।
ভুক্তভোগিদের আক্ষেপ, এভাবে যদি প্রতারণা করা সহজ হয় তাহলে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কি প্রয়োজন ছিলো? নানা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও অবাক হচ্ছেন নামে বেনামে সিমের রেজিস্ট্রেশন দেখে।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন জানান, আসলে নিজেদের সর্তক হওয়া বেশি জরুরী । কেননা সিমের রেজি- বিষয়ে তথ্যে গড়মিল বেশি। এটা সিম কোম্পানীর নিববন্ধনের দুর্বলতা বলে মনে করি আমি”।