খুলনা রেলওয়ে থানার (জিআরপি) ভেতর এক নারীকে আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিটিকে।
কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করে পাকশী জেলা রেলওয়ে পুলিশ। রেলওয়ে পুলিশের অন্য দুই কর্মকর্তাকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২ আগস্ট সন্ধ্যায় বেনাপোল থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেনের এক কামরা থেকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ এক নারীকে আটক করেন রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক লতিকা বিশ্বাস। রাতেই ওই নারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। ওই নারীকে রাতে থানায় পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়। রাতে থানার ভেতরেই ওই নারীকে ধর্ষণ করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠান। এরপর একে একে পুলিশের আরও চার সদস্য তাঁকে ধর্ষণ করেন।
সোমবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শফিউজ্জামান দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, ওই নারীর শরীরে কোনো ক্ষতস্থানের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিন্তু অনেক সময় ক্ষত পাওয়া না গেলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে। সংগৃহীত আলামত পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ধর্ষণের বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।
ধর্ষণের শিকার নারীর বড় বোন বলেন, তাঁদের মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সিলেটের শ্বশুরবাড়ি থেকে মাকে দেখতে খুলনায় এসেছিলেন তাঁর ছোট বোন। এরপর নিজের চিকিৎসার জন্য যশোরে গিয়েছিলেন তিনি। গত শুক্রবার রাতে ফিরে আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাঁকে মোবাইল চুরির অপরাধে থানায় ধরে নিয়ে যায়। এরপর রাতে থানার ওসি ওসমান গনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য তাঁর বোনকে গণধর্ষণ করেন। পরদিন শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দেওয়া হয়।
আদালতে বিচারকের সামনে গণধর্ষণের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ধর্ষণের শিকার ওই নারী, এমনটাও জানিয়েছেন ওই নারীর বড় বোন। এরপর আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
ধর্ষণের শিকার নারীর স্বজনদের অভিযোগ, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। সমঝোতা করতে রাজি না হওয়ায় হুমকি দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা, এমন অভিযোগও করেছেন তাঁরা।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ওসি ওসমান গনি তিনি বলেন, ফেনসিডিলের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ওই নারী মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। থানায় রাতে আটজন পুলিশ সদস্য পাহারায় ছিলেন। এ অবস্থায় ধর্ষণের ঘটনা সম্ভব নয়।