অফিস সহকারীর সঙ্গে জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিওটি পোস্ট কর হয়। তবে শুক্রবার সকাল থেকে ওই আইডিতে আর সেই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার আগেই ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারের বিভিন্ন গ্রুপে তা ছড়িয়ে পড়ে।
এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছিল, ভিডিওটি অফিসের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি) ধারণ করা। কিন্তু নিজের অফিসে বসানো সিসি ক্যামেরার সামনে এমন কাজ কেনো করতে যাবেন? এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেলো ভিন্ন কথা। আসলে ওই রুমে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিলোই না। ভিডিওটি ধারণ করা হয় গোপন ক্যামেরায়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময় সংবাদকে জানান, অফিস কক্ষের পাশের ওই রুমটিতে আগে বিশেষ মিটিং করতেন ডিসি। পরে টেবিল চেয়ার সরিয়ে সেখানে খাট বসানো হয়। বলা হয়, রুমে তিনি বিশ্রাম নিবেন।
এদিকে ওই নারী সঙ্গে ডিসির সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে যে, অফিস সহায়ক হলেও তার খবরদারি চালাতো সবার সঙ্গে। তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে অফিসের কর্মীদের মধ্যে কেউ ওই রুমে গোপন ক্যামেরা সেট করেন। আর তাতেই ধরা পড়ে বিশ্রাম রুমে ডিসির আপত্তিকর ভিডিও।
৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ৩ আগস্ট জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে তার কার্যালয়ের এক নারী কর্মীর সঙ্গে অফিস কক্ষের পাশের রুমে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদেরকে বলেন, তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। সাংবাদিকদের কাছে একটু সময় চান। প্রকৃত ঘটনা জানতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে এসময় তিনি ঘটনাটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহবানও জানান। ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি সাজানো ভিডিও। একটি হ্যাকার গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করলেও আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। বানোয়াট ভিডিওটি একটি ফেক আইডি থেকে পোস্ট দেওয়া হয়।’
তবে ভিডিওটিতে দেখানো কক্ষটি তার অফিসের বিশ্রাম নেওয়ার কক্ষ এবং ভিডিওর ওই নারী তার কার্যালয়ের ‘অফিস সহায়ক’ হিসেবে কর্মরত বলে তিনি নিশ্চিত করেন। এসময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্যও অনুরোধ করেন।
এসময় জেলা প্রশাসনের লোকজন জোর করে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনেকের ফোন থেকে আলোচিত ভিডিওটিও মুছে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা।জামালপুরের নারী নেত্রী এডভোকেট শামীম আরা বলেন, জেলার সরকারি শীর্ষ একজন কর্মকর্তার কাছে নানা সমস্যা নিয়ে নারীরা তার কার্যালয়ে যান। নিরাপত্তাও চান তার কাছে। কিন্তু রক্ষক যদি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তাহলে নারীরা কোথায় নিরাপদ। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। এ ঘটনায় জামালপুরের নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি সাংবাদিকদের বলেন, জামালপুরের জেলা প্রশাসকের একটি ভিডিও ভাইরালের খবর তিনি শুনেছেন। যদি ঘটনা সঠিক হয়, তবে সেটা ন্যাক্কারজনক। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে।