চট্টগ্রাম ব্যুরো:
টেকসই একটি জেটিঘাটের অভাবে প্রাত্যহিক জীবন যাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে ৩৫হাজার মানুষের। মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র জেটিঘাট ছিল এটি। কিন্তু দীর্ঘ ২২বছরে সংস্কার হয়নি, অযতœ অবহেলা আর সংস্কার না থাকায় প্রায় বিলান হয়ে গিয়েছে। যেন দেখার কেহ নেই।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন তীব্র স্রোতের ধাক্কায় ঝরাঁজীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় জেটিঘাটটি। যা এখনই নতুন নির্মাণ ছাড়া উপায় নেই বলে স্থানীয়দের দাবি।
কেননা সম্প্রতি সরকারের মেগা সব প্রকল্প ও অর্থনৈতিক জোন গড়ে ওঠছে এর আশেপাশেই। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে হাজারো মানুষ ঘাট পারাপার হচ্ছে ঝুঁকিতে। ঝুঁকিপুর্ণ জেটি দিয়ে ভয়ে পার না হয়ে কাদাঁয় নামতে বাধ্য হচ্ছে সরকারী নানা কর্মকর্তা ও গ্রামের জনগণ।
সরেজমিনে ঘাটটি পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা জানান ,১৯৯৬ সালে তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ধলঘাটা ইউনিয়নবাসীর দাবির মুখে জেলা পরিষদ এলজিইডির মাধ্যমে ঘাটটি নির্মাণ করেছিল। এরপর থেকে আর কোন সরকারের আমলে ছোঁয়া লাগেনি। মহেশখালী মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর, ধলঘাটা-মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মিতব্য নানা মেগা প্রকল্পের কাজে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার মানুষজন এ ঘাট হয়ে যাতায়াত করছে। তবুও ভাগ্য ফিরেনা এ জেটিটির।
জানা যায়, ১টি ইউনিয়ন ও ৩৫হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র সম্বল মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটার এই জেটিঘাট। ১৯৯৬ সালে তৈরী ঘাটটি বর্তমানে ঝরাঁজীর্ন আর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে।
ডিজিটাল সরকারের উন্নয়নে ১৯৯৬ সালের পর আবারো ২০১৮সালে নতুন একটি জেটিঘাট চায় স্থানীয় জনগণ। গুরুত্বপূর্ণ ঘাটটি নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যামাত্রা (এসডিজি)’র দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন। কেননা ধলঘাটা এলাকায় সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্প শুরু করতে প্রায় প্রতিদিন মন্ত্রী, সচিব, এমপি, ডিসিসহ অনেক বিদেশীরা আসা যাওয়া করছেন।
জানা যায়, পুর্বের ঘাটের প্রস্ত ৮ ফুট ও দৈর্ঘ্য ৩০০ ফুট। কিন্তু জনস্বার্থে বর্তমানে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে প্রস্থ ১২ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৫০০ফুট। এ সরকারের আমলে আধুনিক যাত্রী ছাউনি বিশিষ্ট নতুন একটি জেটির স্বপ্ন দেখছে গ্রামের মানুষ।
বর্তমানেও ধলঘাটা -মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনেক মালামাল ও দেশি বিদেশি প্রকৌশলীরা পারাপারে এ ঘাট ব্যবহার করছেন। তাছাড়া ধলঘাটার উৎপাদিত লবণ,চিংড়িমাছ,কাকড়া ও নানা সামুদ্রিক মৎস্য এ ঘাট দিয়েই নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হত।
ধলঘাটা ইউনিয়নের লবণ চাষী আলতাজ ও সালেহ আহমদ জানান, জেটিঘাটটি মহেশখালী উপজেলার সাথে পুরা ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন। র্দীঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় জনজীবন স্থবির হয়ে রয়েছে। অতিদ্রুত পুনঃনির্মাণের আবেদন জানান তারা।
বর্তমানে জোয়ারের স্রোতে ঘাটের কয়েকটি পিলার কষে দেবে গিয়ে এটি চরম ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি দ্রুত নির্মাণ করা না হলে এলাকার লবণ চাষীরা বিপদে পড়ে যাবে। সাথে দেশ বিদেশের নানা প্রকৌশলী ও অর্থনৈতিক কাজে আসা মানুষেরা ও নানা বিপাকে পড়ছে।
ধলঘাটার হাসান আলী জানান, “ঘাটটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই নদীর স্রোতে পুরো ঘাটটি ভেসে যাবে। আমরা দ্রুত ঘাটটি নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি”।
তথ্যমতে, মহেশখালী সোনাদিয়া বন্দর, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভাসমান এলএমজি গ্যাস, চিংড়ি জোনের যাতায়াত ছাড়াও এলাকাটি এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
অতীতে এখানে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন বিকেলে কয়েকশ দর্শনার্থী আসতো। জনগুরুত্বপূর্ণ এ জেটিঘাটটির বেশ কয়েকটি পিলার দেবে গিয়ে ঘাটটি এখন নড়বড় হয়েছে। এতে দর্শনার্থীরাও আর আতঙ্কে আসেন না। তেমনি পারাপারেও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়ে রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত কিন্তু পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকায় রিফাইরিং ও করতে পারিনি। তবে ফেরী ঘাটটি জরুরী ভিত্তিতে পূনঃ নির্মাণ দরকার”।
মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হোসাইন ইব্রাহিম বলেন- “ধলঘাটার চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বিষয়টি মাসিক উপজেলা সমন্বয় মিটিং এ উত্তাপন করায় সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দূর্ঘটনা এড়াতে ঘাটটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে”।
মহেশখালী উপজেলা প্রকৌশলী জাকের হোসাইন বলেন, “বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান অভিযোগ করার পর আমরা পরিদর্শন করেছি এবং পূনঃ নির্মানের জন্য প্রতিবেদন তৈরী করা হচ্ছে”।
ধলঘাটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, “আজ দুই বছর ধরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ অনেক পত্র পত্রিকায় লেখালেখির পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি কতৃপক্ষ। সম্প্রতি এম.পি আশেক উল্লাহ রফিক ঘাটটি পূনঃনির্মানের জন্য একটি ডিওলেটার ও দিয়েছেন। এখন শুধু প্রতিক্ষার পালা”।
নানা প্রতিশ্রুতির মাঝেও জনগণ স্বপ্ন দেখছে ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ধলঘাটাবাসীর স্বপ্নও যেন পূরণ হয়্।