জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম ব্যুরো:
কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে সিডিএ সড়কের উপর গড়ে ওঠে ব্রীজঘাট কাঁচাবাজার। বাজারটি নিম্নমানের বাজারের মধ্যে অন্যতম বলা যায়। কেননা ময়লা আবর্জনা সরানো ও পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই।
নিয়ম মানছে না বাজারের শাক-সবজি বিক্রেতা , মাছ মাংস ও ব্রয়লার ব্যবসায়ীদের ৫০ হতে ৬০টি ভাসমান দোকানের মালিক। যা দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মানুষের জন্য খুবই দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে-উপজেলার চরলক্ষ্যা,শিকলবাহা,জুলধা,বড়উঠান, ইছানগর, খোয়াজনগর, চরপাথরঘাটা-সহ নানা মিল ফ্যাক্টরীতে কর্মজীবি মানুষের যাতায়াত এ সড়ক দিয়ে। দৈনিক প্রায় ৩০-৪০ হাজার মানুষের চলাচল। এমনিতেই চলতি বর্ষায় সড়কের বেহাল দশা হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগেরও কমতি নেই সাথে।
বাজারের উত্তর পাশে সড়কের উপর আপেল কমলা ও মাছের দোকান। যেকোন মুর্হুতেই ঘটতে পারে বড় বিপদ। কেননা সড়কে এস আলম ও ডায়মন্ড-সহ বহু কোম্পানীর ভারী গাড়ির চলাচল নিয়মিত। তার উপর বাজারে আগন্তুক শত মানুষের উপচা ভিড়ে ক্রমশই লেগে থাকে যানজট। জনসাধারণের চলাচলের জায়গায় ব্যক্তি বিশেষের দোকান কতটা যুক্তিযুক্ত তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে জনসাধারণ।
অন্যদিকে তরি-তরকারির পঁচা অংশ,কাঁদা মাটির জলাবদ্ধতা, ব্রয়লারের বিষ্ঠা এবং কাটা মাছের অংশে বের হওয়া নাড়িভুঁড়ির পঁচা গন্ধে যেন অতিষ্ঠ চলাচল করা মানুষ।
পথচারী এবং স্থানীয় কয়েকজন ক্রেতা জানান- আমরা যেন এই এলাকায় বসবাস গড়ে পাপ করেছি, বাজারের এ অবস্থা উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসছেনা কিছুতেই।
অনেকে জানান, কতৃপক্ষের কোনো সু-নজর না থাকায় ব্রীজঘাট কাঁচা বাজারের দুর্গন্ধ আর যানজট দিন-দিন বেড়েই চলেছে। তাই দুর্গন্ধ আর যানজটের নোংরা কবল থেকে মানুষকে বাঁচাতে কর্তৃপক্ষের সু-নজর কামনা করেন এলাকার জনগণ।
পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বাজারের ব্যস্তময় স্থানে। তিন দিকে কাঁচাবাজারে প্রবেশপথ হতে মাঝখানে নুর মার্কেটের সীমানা ও ভাই ভাই মার্কেটের রাস্তাঘাটের অবস্থা কাঁদায় জর্জরিত।
পানি চলাচলের ড্রেনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে রাস্তাঘাট কাঁদায় স্যাতঁস্যাঁতে পরিণত হয়। ফলে নারী পুরুষেরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গেলে নানা বিড়ম্বনার শিকার হন।
জানা যায়, স্থানীয় ব্রীজঘাট কাঁচা বাজারে কৃষকের উৎপাদিত শাকসবজি ফলমূল,তরি-তরকারি, পান-সুপারি,মশলাপাতি, মাছসহ নানা পণ্যের ক্রয় বিক্রয়ের কেন্দ্রবিন্দু। নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকায় পাশের অন্যান্য বাজার হতে চড়া দামে সবকিছু কেনাবেচা হয়।
সাধারণত সপ্তাহে প্রতিদিন এখানে বাজার বসে। উপকূলের বিভিন্ন স্থান ও জাহাজের মঝিমাল্লারা নানা পন্য ক্রয় করতে আসে এই কাঁচা বাজারে। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এই ব্যস্ততম বাজারে মূলত ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ১৩ বছরেও এই বাজারে ইজারা না থাকায় সরকার যেমন একদিকে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তেমনি অপরিকল্পিত বাজার গড়ে তোলায়, নেই কোন সরকারী বরাদ্দ কিংবা উন্নয়নের ছোঁয়া। পর্যাপ্ত যাত্রীছাউনী ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাও এখনো গড়ে ওঠেনি। সাথে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদও নীরব বলে জানা যায়।
তথ্যমতে, ব্রীজঘাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাহাব উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক শাহআলম নামে স্থানীয় দুব্যবসায়ী মূলত এই কাঁচাবাজার তদারকি করে বলে জানা যায়। সম্প্রতি ওই সমিতির বিরুদ্ধেও নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে।
এমনকি প্রতিদিন বাজারে নানা পণ্য বিক্রি করতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী ও মাসিক হিসেবে বসা দোকানদারেরা দৈনিক যে টাকা আদায় করে তা সমিতির অধীনে এক ব্যক্তি উত্তোলন করে বলে জানা যায়।
ফলে এই বাজার থেকে আসা বিপুল পরিমাণের অর্থ প্রতিবছর সরকারি তহবিলে জমা পড়েনা তা অনেকটা নিশ্চিত। কেননা সর্বপ্রথম ২০০৬ সালে পটিয়া উপজেলা পরিষদ কতৃক ১লক্ষ ৫হাজার টাকায় ইজারা ডাক পেয়েছিল চেয়ারম্যান বকুল। এরপর কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ গঠিত হলেও এখনো বাজারটি কোন ইজারায় অর্ন্তভুক্ত হয়নি।
দাবি ওঠেছে, বাজার পরিষ্কার পরিছন্ন এবং সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করার লক্ষ্যে উপজেলার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় জনগণ। এমনকি সরকারের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রাও বৃদ্ধি পাবে এই জন্য দরকার প্রথমে জলাবদ্ধতা ও কাঁদামুক্ত পরিছন্ন বাজার ব্যবস্থা। যে বাজার হবে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ভোক্তা বাজার। এমনটি প্রত্যাশা করেন এলাকার দুই সাবেক ইউপি সদস্য কবির আহমদ ও এসএম কালা মিয়া ।
বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট নুর মার্কেটের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব ফজল আহমেদ জানান, “বাজারে পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা নেই তবে সামনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।
পরিষদের ইজারা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইজারা নেই কেননা বাজারের জায়গাটি আসলে সিডিএ’র, কোন কারণে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের রোজি রোজগারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানান তিনি”।
মিন্টুও মন্নান নামে দুজন পথচারী বলেন, ‘কেনা-কাটা করতে গেলে ওই ময়লা-কাঁদা পানির উপর দিয়ে যেতে হয়। এতে কাপড় নষ্ট হয়। কাঁদা পানি মাড়িয়ে বাজার করতে হয় বলে অনেকে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছে।’
কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে জমে যায় হাঁটুপানি। দোকানে কাস্টমার আসতে পারে না। ফলে আমরা বেচা-বিক্রি করতে পারি না। এই দুর্ভোগ কতদিন চলবে কে জানে। তবে ব্যবসায়ীরা দৈনিক হিসেবে টাকা পরিশোধ করে বলে জানান।
এলাকার এক বর্ষীয়ান মুরুব্বী জানান, “মূলত বাজারটি গড়ে ওঠেছে বিএফডিসি ও সিডিএ’র বিএস ৬১ ও ৬৯ দাগের জায়গার উপর। অসাবধানবশত ৬৮সালের দিকে বিএস জরিপে সিডিএ’র দখলে গেলেও পরে বিএফডিসিকে জায়গাটি দিয়ে দেন সিডিএ”।
যদিও ২০০৬ সালে প্রথম ইজারা দেওয়া পটিয়া উপজেলাকে ইজারা না দিতে সুপারিশ কওে চিঠি দেয় সিডিএ। এরপর হতে ব্যক্তি বিশেষে ভোগ দখলে রয়েছে বাজারটি।
কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে দ্রুত সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হবে”।