স্টাফ রিপোটার:নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহন, হয়রানি, দরপত্র ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা।বুধবার (১৫ জুলাই) দুপুরে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও শিবপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ঠিকাদারগণ। মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলনে উপজেলার অর্ধশতাধিক ঠিকাদার অংশ নেয়।
এসময় তারা ইউএনওর বিরুদ্ধে পৌরসভা এবং উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন কাজে ১২% কমিশন, কমিশন ছাড়া ফাইল আটকে রাখা, দরপত্র ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।তবে সাংবাদিকদের নিকট এসব অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির।
লিখিত অভিযোগ ও মানববন্ধনে ঠিকাদাররা জানান, শিবপুরের ইউএনও মো. হুমায়ুন কবির উপজেলার পাশাপাশি শিবপুর পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর যোগদানের পর থেকে পৌরসভার এবং উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন কাজে অনৈতিক সুবিধা নিতে ঠিকাদারদের হয়রানি করে আসছেন।
তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীন গ্রামীণ রাস্তার উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজে ১২% কমিশন গ্রহণ করে থাকেন। কোন ঠিকাদার কমিশন দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে কোন কারণ ছাড়াই তার ফাইল আটকে রেখে নানা অজুহাতে বিল কেটে দেন এবং বিল প্রদানে বিলম্ব করেন। শিবপুর পৌরসভার আইইউআইডিপি প্রকল্পের আওতায় ৬ টি প্রকল্পের কাজে ১০% কমিশন গ্রহণ করে থাকেন। ঠিকাদারদের জামানতের টাকা এক বছর পর উত্তোলন করার নিয়ম থাকলেও টাকা উত্তোলন করতে গেলে তাকে উৎকোচ বা কমিশন দিতে হয়।
অন্যথায় দীর্ঘদিন ফাইল আটকে রেখে হয়রানি করেন।এছাড়া ইউএনও প্রভাব খাটিয়ে কোন রকম দরপত্র ছাড়াই শিবপুর উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, লেক নির্মাণ, আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।এদিকে পৌর শহরের আবদুল মোতালিব খানের বাড়ি হতে ইব্রাহিম মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত সিসি ঢালাই কাজ সম্পন্ন করেন মেসার্স এশিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সামসুল হুদা মুকুল। কাজ শেষে তিনি বিল উত্তোলন করতে গেলে ইউএনও তাঁর কাছে ৩৫ টি সিমেন্টের তৈরি পিলার দাবি করেন। ঠিকাদার দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে কোন কারণ ছাড়াই পিলার বাবদ ৩০ হাজার টাকা কেটে রেখে দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থে দুস্থ অসহায় মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। ওই ঘর নির্মাণ কাজটি কোন দরপত্র ছাড়াই ইউএনও নিজেই সম্পন্ন করেন।
এতে নিম্ন মানের ইট ও টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। যার অনেকগুলোর মধ্যে দরনা দেওয়া হয়নি। মেসার্স রুমি এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এশিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এডিপি) এর আওতায় আমরা কয়েকজন মিলে ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ইউএনওর চাহিদা মত কমিশন দিতে না পারায় এখনো বিল পাইনি।মেসার্স মাহির এন্টারপ্রাইজের মালিক ফজলে রাব্বি খান বলেন, আমি একটি ব্রিজের কাজ করেছি। বিল উত্তোলনের সময় আমার কাছ থেকে তিনি ১২% কমিশন নিয়েছেন।
আবার জামানতের টাকা উত্তোলনের সময়ও টাকা দাবি করে। কিন্তু আমি না দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পর জামানতের টাকা ফেরতদিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের নিকট এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবী করে বলেন, ঠিকাদারদের সঙ্গে সরাসরি আমার কোন কাজ নেই। কমিশনের বিষয়টি সংশ্রিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। আর কিছু কিছু কাজ ভালোভাবে করার জন্যই নিজে তদারকি করেছি। ঠিকাদাররা নিম্নমানের কাজ করে।