স্টাফ রিপোটার: নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালস্থ বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ জুটমিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এবার স্থায়ী-অস্থায়ীসহ সব শ্রমিক-কর্মচারীকে বাসা, দোকান ও লিজকৃত আবাদি জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মিলের প্রধান গেটে গতকাল সোমবার রাতে বাসা ছাড়ার এক নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।
নোটিশে জানা যায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট-১ অধিশাখার একপত্রে ৩০ জুন ২০২০ মোতাবেক সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জুট মিলস্ কর্পোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ঘোড়াশালস্থ বাংলাদেশ জুট মিলসহ ২৫টি পাটকল শ্রমিকদের চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় অবসানসহ উৎপাদন কার্যক্রম ১ জুলাই থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
উক্ত আদেশ বাস্তবায়নের জন্য আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের সব স্থায়ী, বদলি, দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের নামে বরাদ্দকৃত বাসা, কাঁচাঘর, দোকানপাট, লিজকৃত আবাদি জমি মিল কর্তৃপক্ষের নিকট বুঝাইয়া দিয়ে মিল এলাকা ত্যাগ করার জন্য বলা হয়েছে। গত ২ জুলাই রাত থেকে বাংলাদেশ জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
মিলের সিবিএ সভাপতি ইউসুফ আলী সরদার জানান, মিলের প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী এই করোনা পরিস্থিতিতে ও ঈদকে সামনে রেখে মিলের উৎপাদন বন্ধ করার কারণে এমনিতেই বেকার হয়ে পড়েছে। তার উপর তাদের সবে পাওনাদি না দিয়ে তাদের বাসাবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয়া ঠিক হয়নি। কোনো শ্রমিকের হাতেই টাকা নেই। মালামাল নিয়ে বাড়ি যাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব না। তাই মিল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ পাওনা টাকা পরিশোধ করে তাদের যেন বের করা হয়।
এ দিকে মিলের পাওনা টাকা পরিশোধের আগে এমন খবরে হতাশা প্রকাশ করে মিলের শ্রমিক ইকবাল ও মো. আব্দুস সালাম জানান, সরকার আমাদের পাওনা পরিশোধ না করে বের করে দিলে কোথায় যাব। নতুন বাসায় উঠতে গেলে অ্যাডভান্স টাকা দিতে হয়। এ ছাড়াও করোনা ও বর্ষার সময় চলছে। বাসার মালামাল নিয়ে আমরা যেতেও পারব না, এখন আমাদের কি উপায় হবে! আর যদি এ সময়ের মধ্যে আমাদের পাওনা পরিশোধ করে দেন তাহলে নোটিশ অনুযায়ী আমরা চলে যাব। আর যদি সমস্ত পাওনা পরিশোধ না করে তাহলে যেন বাসা ছাড়ার মেয়াদ বাড়ানো হয়। তা ছাড়া আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত। ডিসেম্বর না আসা পর্যন্ত অন্য স্কুলে ভর্তিও করাতে পারব না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মো. মতিউর রহমান মণ্ডল জানান, নোটিশ অনুযায়ী শ্রমিকরা জুলাই ও আগস্ট মাস পর্ষন্ত থাকতে পারবে। মিলে প্রায় ১৫০টি পরিবার আছে। ২০টির মতো দোকান আছে। আর শ্রমিকরাতো কলোনি ছেড়ে সবাই ইতিমধ্যে চলে গেছেন।
তিনি আরও জানান, নোটিশের দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকরা পাওনা টাকা পেয়ে যাবে, তখন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পারবে। সে জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তার পরও যদি কারও পরিবারের সমস্যা থাকে এবং কলোনিতে আরও ১ মাস থাকার জন্য আবেদন করে আমরা সেই সুযোগও দিব। এটা নিশ্চিত আমরা কাউকে জোর করে উঠাব না।