স্টাফ রিপোটার:কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের ধলই চা-বাগানে গতকাল সোমবার সকাল থেকে সারা দিন শ্রমিকদের দিয়ে তিন গুণ চা-পাতা উত্তোলন করানো হয়। সন্ধ্যায় রহস্যজনকভাবে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কারখানার অফিসের নোটিশ বোর্ডে একটি নোটিশ টাঙিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাগান বন্ধ ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ধলই চা-বাগান কারখানার সামনে শতেক চা-শ্রমিক অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সকালে ধলই চা-বাগানে গেলে চা-বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি গৌরাঙ্গ নায়েক, সাধারণ সম্পাদক সেতু রায়, ইউপি সদস্য শিব নারায়ণ, সাবেক ইউপি সদস্য তুলসী মাদ্রাজি, চা-শ্রমিক সন্তান শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইরাজ মিয়া ও নারী শ্রমিক খোদেজা বেগম বলেন, সোমবার সকাল থেকে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তাঁদের দিয়ে তিন গুণ চা-পাতা উত্তোলন করায়। কারখানার বাবু গোলাম হোসেন তাঁদের বলেছিলেন, মঙ্গলবার বিদ্যুৎ থাকবে না, তাই যেন তাঁরা অতিরিক্ত কাজ করেন।
সে হিসাবে তাঁরা এক দিনে তিন গুণ কাজ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় ধলই চা-বাগান কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক এম এম ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ টাঙিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য চা-বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, চা-বাগানে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। এ অবস্থায় চা-বাগানে নিরাপত্তার অভাবে ধলই চা-বাগান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাস্তবে ধলই চা-বাগানে কোনো ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ নেই। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী বলেন, ধলই চা-বাগানের দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে গত ২৯ জুন এই বাগানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করেন চা-শ্রমিকেরা।
এরপর দুদিন বিষয়টি নিয়ে চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটি, চা-শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চা-বাগান মালিকপক্ষের যৌথ উদ্যোগে সমঝোতা বৈঠক চলে। ওই বৈঠকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ধলই চা-বাগান কোম্পানির প্রধান কার্যালয় দেবে বলে জানানো হয়। তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া হয় এবং তাঁর স্থলে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক হিসেবে জাকারিয়া হাবিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চা-শ্রমিকেরা ধলই চা-বাগান কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থেকে শান্তিপূর্ণভাবে চা-বাগানে কাজ করছিলেন। ইতিমধ্যে মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করে নোটিশ দিয়ে ধলই চা-বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হলো
রাম ভজন কৈরী আরও বলেন, যে অজুহাতে চা-বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তা শ্রম আইনের পরিপন্থী। আর এখন ঈদের আগে অমানবিকভাবে চা-বাগান বন্ধ করা হলো। চা-শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরকারের দৃষ্টি কামনা করে অবিলম্বে ধলই চা-বাগান খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এ বিষয়ে ধলই চা-বাগান কোম্পানির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, কী কারণে চা-বাগান বন্ধ করা হয়েছে, তা নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি বলতে পারবেন না। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ধলই চা-বাগান কর্তৃপক্ষ কখনো কোনো বিষয়ে তাঁকে অবহিত করে না। একটি নোটিশের কপি পেয়ে তিনি জানতে পারলেন শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ধলই চা-বাগান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নোটিশে উল্লেখিত কারণের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। ধলই চা-বাগানে এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।