স্টাফ রিপোটার:নরসিংদীর শিবপুরে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর হাতে স্ত্রী ও বাড়িওয়ালাসহ ৩ জন খুন হয়েছে। আহত হয়েছে আরো দুই জন। রবিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শিবপুর উপজেলার কুমরাদি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। আলামত সংগ্রহ ও নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ঘটনার পর পরই স্বামী (বাদল মিয়া) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, দাম্পত্য কলহের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
এদিকে, বিকেলে নিহতদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে উৎসুক গ্রামের মানুষ নিহতের মরদেহ দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায়। সন্ধ্যায় নামাজের জানাজা শেষে নিহতদের মরদেহ দাফন করা হবে।
নিহতরা হলেন- বাদল মিয়ার স্ত্রী নাজমা আক্তার (৪৫),বাড়িওয়ালা তাজুল ইসলাম (৬০), তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫০)।
গুরুত্বর আহতরা হলেন- বাড়ীওয়ালার মেয়ে কুলসুম (২৫), নিহত নাজমার ছেলে সোহাগ (১২)কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছেন, কাঠমিস্ত্রি স্বামী বাদল মিয়া শিবপুরের কুমড়াদি গ্রামে তাজুল মিয়ার বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জের ধরে স্ত্রী নাজমা বেগমের মনমালিন্য চলে আসছিল। এর জেরে ধরে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। এরই মধ্যে রবিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নিহত নাজমার ঘর থেকে হৈইচৈই এর শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।
শব্দ পেয়ে বাড়িওয়ালা তাজুল ইসলাম,তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও নিহত নাজমা বেগমের ছেলে নাদিমসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। এসময় তারা বাদল মিয়াকে নিভৃত করার চেষ্টা করে। এতে সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িওয়ালা ও উপস্থিত লোকজনকে এলোপাথারী কুপাতে থাকে। এতে ৫ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে আনার পর নাজমা ও মনোয়ারা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অবস্থার অবনতি হলে তাজুল ইসলামকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। পরে ঢাকায় নেওয়ার পথে সে মারা যায়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনার পর পরই স্বামী বাদল মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপালে ভর্তি করেন। এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহতের স্বজনরা।
নিহতের নাজমা বেগমের ছেলে নাহিদ বলেন, আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ হৈচৈ শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে আসি। এসে দেখি দরজার নিচ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। দরজা খুলে দেখি বাবা আমার মাকে কুপাচ্ছে। তাকে থামানোর চেষ্টা করলে তিনি আমাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করতে আসে। এর মধ্যে যারাই তাকে থামাতে গিয়েছে তাদের সবাইকে এলোপাথারী কুপাতে থাকে। পরে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে বাবার হাত থেকে ছুড়ি নিয়ে যায়। পরে সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত বাড়ীওয়ালার মেয়ে পারুল বলেন, ভাড়াটিয়াদের কারনে আমার নিরপরাধ মা-বাবাকে মরতে হলো। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
খবর পেয়ে শিবপুর থানা পুলিশ, উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান, ইউপি সদস্য সহ স্থানীয়রা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এক সাথে এক বাড়িতে ৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাড়ি জুড়ে চলছে কান্নার রোল। শোকে বিহব্বল হয়ে পড়েছেন নিহতের স্বজনরা। শোকের ছাড়ায় নেমে আসে গ্রাম জুড়ে। হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী। বিকেলে নিহতদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে উৎসুক গ্রামের মানুষ নিহতের মরদেহ দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায়। সন্ধ্যায় নামাজের জানাজা শেষে নিহতদের মরদেহ দাফন করা হবে।
শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান বলেন, একটি বর্বোরচিত ঘটনা ঘটে গেছে। কোনভাবেই তা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আবুল কালাম বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। স্বামী বাদল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। তবে এখন পযর্ন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। পরবর্ত্তীতে আইনানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হচ্ছে।