সুমন বর্মণ: ভৌগোলিক কারণেই অমিত সম্ভাবনাময় নরসিংদী জেলা। পুরো জেলাকে আপন মায়ায় ঘিরে রেখেছে মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা নদী। বুকের মাঝ দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। তার সঙ্গে রয়েছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা ময়মনসিংহের পূর্বাঞ্চলীয় রেল যোগাযোগ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পরও আমরা সম্ভাবনার কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছি ? আর এই ব্যার্থতার দায় কার ?
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নরসিংদীবাসীকে আনন্দে ভাসিয়েছে আন্তঃনগর ৩টি ট্রেনের যাত্রাবিরতি। আর এই সাফল্য যার হাত ধরে এসেছে তিনি শিবপুরের সংসদ সদস্য রেলওয়ে সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
কিন্তু সেই কাজও সহজ ছিলনা এমপি সিরাজ মোল্লার জন্য। যখন ভৈরব-টঙ্গী ডাবল লাইন উদ্বোধনের পর নরসিংদীর সর্বস্তর থেকে আওয়াজ উঠেছিল সকল আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির তখন আমরা সংবাদকর্মীরা এমপি সাহেবকে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। তিনিও আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নরসিংদী রেল স্টেশনে পরিদর্শনে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক বাঁধায় আসতে পারেননি। সেদিন ওনার মন খারাপ হয়েছিলো, তিনি ট্রেনের যাত্রাবিরতির উদ্যোগ থেকে সরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।
কিন্তু তিনি ধমে যাননি, নরসিংদীবাসীর ন্যায্য দাবী আদায় করতে সংগ্রাম করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে। কারণ প্রচলিত আছে রেলপথে নরসিংদীর যাত্রীরা টিকেট কাটেন না। অন্য জেলার যাত্রীদের সঙ্গে অসাদাচরণের অভিযোগও রয়েছে।
কিন্তু প্রচলিত সেই ধারণাকে গত দুই বছর ভুল প্রমাণিত করেছে নরসিংদীর ট্রেনের যাত্রীরা। লাফিয়ে বেড়েছে নরসিংদী স্টেশনের আয়। পাল্টে গেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পুরণো ধারণা।
ফলে গত কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল নরসিংদীতে বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি হচ্ছে।
কিন্তু লোকমুখের কথা কারও নিকটই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিলনা।
এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর এলো কাঙ্খিত সেই দিন। নরসিংদী স্টেশনে ৩টি আন্তঃনগর ট্রেন উপকুল, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতির অনুমতি দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়।
অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টম্বর) কালনী ট্রেনে নরসিংদী স্টেশনে বীরের বেশে আসলেন এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। চোখেমুখে বিজয়ের উচ্ছাস। লোকমুখে এমপি সিরাজ মোল্লার জয়ধ্বনি। উচ্ছাস্বিত মানুষের ভীড় টের পাচ্ছিল মঞ্চের টেবিলটাও। বামদিকে যখন কাত হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল তখনই শান্ত হয় উচ্ছাস্বিত জনতা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সদরের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক)।
এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিল প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের আধিপত্য। ছিলনা ট্রেনের যাত্রাবিরতির জন্য আন্দোলনকারী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেপথ্যের নায়কেরা। আমি সেই সকল নেপথ্যের নায়কদের জানাই লাল সালাম। অভিবাদন জানাই অদম্য এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে।
সেই সঙ্গে বলতে চাই এখনো নরসিংদীতে অনেক অপ্রাপ্তি রয়েছে। আমরা পাইনি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ। নরসিংদীবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে পরবর্তী মহানায়ক কে হচ্ছে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক
সাংবাদিক