মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে দেড় বছরে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহানের প্রথম অভিযোগ ছিল ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’। থানা পুলিশের তদন্তে সেই অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রথম চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেলে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেন নুসরাত। এবার তিনি হত্যা ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ তোলেন। অবশেষে প্রমাণ হলো, নুসরাতের সেই অভিযোগও অসত্য, ষড়যন্ত্রমূলক। নুসরাতের দ্বিতীয় মামলাটির দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত মঙ্গলবার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতে মামলাটির কোন অভিযোগেরই সত্যতা না পাওয়ায় সব আসামির অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।
মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুটি অভিযোগের তীরই ছিল দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের দিকে। দেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে বিপদে ফেলতে মুনিয়ার বোন যেমন মরিয়া হয়ে উঠেছেন, পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবসায়িক বিভিন্ন প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের ফাঁদেও পড়েছেন তিনি। আর কোনো দোষ না করেও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে সায়েম সোবহান আনভীরকে। মিথ্যা অভিযোগ মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন মানসিকভাবে কঠিন পরিস্থিতি পাড়ি দিতে হয়েছে তাঁকে। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বয়ে বেড়াতে হয়েছে এক দুঃসহ যন্ত্রণা। পুলিশের দীর্ঘ তদন্তে আনভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের ন্যূনতম সত্যতা মেলেনি। তাহলে এতদিন ধরে যে তিনি মিথ্যা অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হয়েছেন, তার দায় কে নেবে? তাঁর যে মানসিক যন্ত্রণা, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাঁকে হেয় করার অপচেষ্টা হলো, এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
এমনকি দ্বিতীয় মামলায় শুধু আনভীর নয়, তাঁর পিতা দেশের সম্মানিত ব্যবসায়ী আহমেদ আকবর সোবহানসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এতেই বোঝা যায় যে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছে বসুন্ধরা পরিবার। দ্বিতীয় মামলায় এমন কিছু কল্পিত অভিযোগ তোলা হয়েছিল, যা সাদা চোখে যে কাউকেই বিভ্রান্ত করতে পারে। মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে তার বোন একের পর এক মিথ্যাচার করে গেছেন। দেশি-বিদেশি সরকারবিরোধী সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে বিপদে ফেলার অপচেষ্টা করতে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধেও বিষেদ্গার করেছেন বহুবার। হেন কোন কাজ নেই, যা করেননি নুসরাত জাহান। এই চক্রটির পেছনে কে বা কারা জড়িত, তা দেশের মানুষের সামনে পরিস্কার হয়ে গেছে।
পিবিআই দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করেছে। এতে বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তদন্তেও এটিই বলা হয়েছে যে, মুনিয়ার আত্মহত্যা করেছিলেন। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান প্রতিবেদন দাখিলের পর বলেছেন, এই মামলায় যে কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছিল, সবার অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। কেননা, এখানে হত্যার অভিযোগের কোন সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন। এমনকি এখানে প্ররোচনার ঘটনাও প্রমাণ হয়নি। এ ছাড়া যেহেতু মামলার তদন্তে তারা ধর্ষণ বা হত্যার আলামত পাননি, এসব কারণে অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন দেখেননি।
অর্থ্যাৎ, বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে নুসরাত জাহান চক্রের দ্বিতীয় অপচেষ্টাও বিফলে গের। পিবিআই যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, এর মাধ্যমে হয়তো নুসরাতের করা মিথ্যা অভিযোগ থেকে আইনগতভাবে অব্যাহতি পাবেন সায়েম সোবহান আনভীর। কিন্তু ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে তাঁকে যে হয়রানি, দুঃসহ মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হল তার দায় কে নেবে?
যখন মানুষ ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়, দোষ না করেও হতে হয় দোষী, তখন ওইসব মানুষের মানসিক অবস্থা কেমন হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানেন। দেশের এত বড় একটি শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার হয়েও হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগের মতো তীব্র মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হলো সায়েম সোবহান আনভীরকে। কোন দোষ না করেও দীর্ঘ দেড় বছর ধরে হত্যা ও ধর্ষণের মতো গুরুতর দুটি মিথ্যা অভিযোগ মাথায় বয়ে বেড়াতে হয়েছে তাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি দায়িত্বশীল গণমাধ্যমেও আক্রোশের বলি হতে হয়েছে বসুন্ধরার এমডিকে। কথিত অনেক গণমাধ্যমে এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে যেন আনভীরের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ প্রমাণিত। আনভীরের বিচার চেয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে যেসব গুজব ছড়ানো হয়েছে, সেসব থেকে রক্ষা পায়নি আনভীরের পরিবারের সদস্যরাও।
বিশেষ করে সায়েম সোবহান আনভীরকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে কত দুঃসহ জীবনযাপন করতে হয়েছে তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। এতদিন ধরে যারা গুজব ছড়ালো তারা কী একবারও ভাবলো না আনভীরও আর সবার মতো সাধারণ মানুষ! তারও একটি পরিবার আছে। তিনিও কোনো মায়ের সন্তান, কোনো নারীর স্বামী, একজন মেয়ের বাবা। ধর্ষণের মতো গুরুতর একটি মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে তিনি যখন তাদের সামনে দাঁড়িয়েছেন, তখন কী পরিমাণ মানসিক যন্ত্রণা তাকে কুঁরে কুঁরে খেয়েছে। কোনো মূল্য দিয়েই এই যন্ত্রণা প্রশমন করা সম্ভব নয়।