মো.শফিকুল ইসলাম মতি,নিউজ সময়:নরসিংদীতে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে অভিনব প্রতারণায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা।বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের সদর উপজেলা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ভুক্তভোগী মোমেন মিয়া, শফিকুল, মামুন, সোহান ও মানসুরা উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগীদের পক্ষে মোমেন মিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালি ইউনিয়নের বাসিন্দা। বর্তমানে আলোকবালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী শহরের উত্তর সাটিরপাড়া (কাজী মার্কেট) সংলগ্নে আমার তানিয়া ও তুহিন টেলিকম নামে দুইটি বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আলোকবালি ইউনিয়নের সাবেক মহিলা মেম্বার মুন্নী আক্তার ও তার স্বামী মাইনউদ্দিন শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায় একইধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সে সুবাদে তার সাথে আমার শখ্যতা গড়ে ওঠে। পরে তার বিকাশের একাধিক সিমে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিলে পরে উক্ত টাকা অস্বীকার করে। এবিষয়ে আমি চাপ দিলে সে তার বাড়ি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবে বলে জানায়। পরে আমার ভাতিজি বাড়ি কিনতে রাজি হলে প্রতারক মুন্নী ও তার স্বামী মাইনউদ্দিনের নিকট নগদ পঞ্চাশ লাখ টাকা হাতে তুলে দেন। পরের দিন তারা বাড়ি বিক্রির দলিল করে দেওয়ার শর্তে তারা আমার বাড়িতে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বাড়িতে পুলিশ আসে।
পুলিশ আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন মুন্নি ও মাইনউদ্দিনকে অপহরণ করে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে পুলিশ প্রতারকচক্রের সদস্য মুন্নী ও তার স্বামী মাইনউদ্দিন সহ আমার ভাতিজাকে থানায় নিয়ে আমাকে অপহরণ মামলা দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ সত্য ঘটনা উদঘাটন করলে আমার ভাতিজাকে ছেড়ে দেয় এবং মুন্নী ও মাইনউদ্দিনকে প্রতারণা মামলায় কোর্টে প্রেরণ করেন। প্রতারক চক্ররা এখনও আমার বিরুদ্ধে অপহরণের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতারক চক্ররা আমাকে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করে আসছে। তাদের হুমকিতে বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই আপনাদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের নিকট আকুল আবেদন আমরা ভুক্তভোগী হিসেবে প্রতারক চক্রদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার সহ পরিবারের নিরাপত্তা চাই।লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা অধিক মুনাফার লোভে পড়ে তাদের হাতে টাকা দিয়েছিলাম।
বুঝতে পারিনাই তারা যে প্রতারক চক্র। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।সম্প্রতি নরসিংদীতে বাড়তি লাভের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আনিকুল ইসলাম নামে এক বিকাশ এজেন্ট।
বর্তমানে তিনি দুবাই পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এবিষয়টি শহরে টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হলে পরে আলিকুল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন সোহান আলী নামে এক ভুক্তভোগী। অতিরিক্ত লাভের ফাঁদে ফেলে টাকা নিয়ে আনিকুল ইসলাম দুবাই চলে গেছেন বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় আনিকুল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার নরসিংদী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযুক্ত আনিকুল ইসলাম আলোকবালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য আরিফা ইয়াসমিন মুন্নীর ছেলে।নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ তানভীর আহমেদ ঘটনার সতত্যা স্বীকার করে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ৭ জন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।
তবে ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রাথমিক তদন্তে বিকাশে অতিরিক্ত লাভের লোভ দেখিয়ে সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ভুক্তভোগীদের টাকা আনিকুল আত্মসাৎ করেছে। আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োাজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভুক্তভোগীদের কেউ হুমকি দিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।