মো. হৃদয় খান: নরসিংদীতে আইসক্রিম ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে মোস্তাক আহমেদ নামে ডিবি পুলিশের এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে। এছাড়া ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ উঠেছে।

শারীরিক নির্যাতন ও টাকা আদায়ের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। একই সঙ্গে ডিবি পুলিশের এসআই মোস্তাক আহমেদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে তারা। রোববার দুপুরে নরসিংদীর পাথগাট এলাকায় এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীর মা তাহমিনা বেগম বলেন, ডিবি পুলিশের এসআই মোস্তাক আহমেদ এলাকার ব্যবসায়ীসহ নিরীহ মানুষকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করছেন। সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। টাকা না দিলে ইলেকট্রিক শক দেয়া হচ্ছে। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, `এসআই মোস্তাক আমার ছেলে সোহেল মিয়াকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জুয়েল এন্ড সোহেল এন্টারপ্রাইজ থেকে পুলিশ সুপার মিজার উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। ওই সময় ও সম্রাট নামে আরেক জনকেও নেয়া হয়। এর পর পর তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য আমাদের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। আমরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই আমার ছেলেকে মারপিট করার পাশাপাশি ইলেকট্রিক শক দেয়া শুরু করেন।’

তাহমিনা বেগম বলেন, `পরে মদনগঞ্জ লাইন এলাকায় নিয়ে চোখ মুখ বেঁধে ক্রয়ফায়ারের ভয় দেখায়। ওই সময় এসআই মোস্তাকের সহকর্মী কনস্টেবল শামসুল আমার ছেলের স্ত্রীকে ফোন করে এক লাখ টাকা নিয়ে যেতে বলে। পরে ডিবি অফিসের সামনে গিয়ে মোস্তাকের হাতে এক লাখ টাকা দিলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।’

একই সঙ্গে কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করেন। জানালে গুলি করে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি প্রদান করেন। এর আগে একই এলাকার গোলনাহার নামে একজনের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা আদায় করেন বলে তিনি জানান।

সোহেলের স্ত্রী তাহিনুর বলেন, `কনস্টেবল শামসুল আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলেন- তোর স্বামীকে ক্রসফায়ার দেয়া হচ্ছে। বাঁচাতে চাইলে ১ লাখ টাকা নিয়ে আয়, অন্যথায় লাশ নিবি। পরে টাকা জোগাড় করে এসআই মোস্তাকের হাতে তুলে দেই।’

ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, `হঠাৎ আমার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে এসে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন ডিবির এসআই মোস্তাক। জানতে চাইলে বলেন, কথা বলেই চলে আসবেন। কিন্তু ডিবি অফিসে নেয়ার পর কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাকে রশি দিয়ে লটকায়। মুখের ভেতর কাপড় গুঁজে এলোপাতাড়ি মারাপিট শুরু করেন।’

তিনি বলেন, `পরে টাকা দেয়ার কথা বলে। কিসের টাকা জানতে চাইলে আরও বেশি মারপিট করে। বাড়ি থেকে টাকা আনতে দেরি হওয়ায় তারা আমাকে চোখে কালো কাপড় বেঁধে ক্রসফায়ার দিতে নিয়ে যায়। পরে টাকা দিয়ে মুক্তি পাই।’

সম্রাটের স্ত্রী রোকসানা বলেন, `পুলিশ সদস্যরা বাসায় এসে মাটি খুরতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমাকে চর থাপ্পর মারতে থকে। পরে আরেকজন এসে লাঠি দিয়ে পিটাইতে থাকে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের এসআই মোস্তাক আহমেদ বলেন, মূলত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সোহেল ও সম্রাটকে আনা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে নিয়ে কবরস্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। তবে অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে টাকা পয়সা লেনদেনের ঘটনা সত্য নয়।

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার অডিও রয়েছে ভুক্তভোগীদের কাছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই মোস্তাক বলেন, ছাড়ার জন্য চাপাচাপি করার কারণে হয়তো কনস্টেবল শামসুল টাকা চাইতে পারে। তবে টাকা নেয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, তারা মাদক ব্যাবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন বলেন, কোনো পুলিশ সদ্যসের বিরুদ্ধে যদি এমন কোনো অভিযোগ উঠে, তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

এখানে কমেন্ট করুন: