মো. হৃদয় খান: নরসিংদীর হাজিপুরে মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় ১০ম শ্রেণির স্কুলছাত্রীর শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী-শশুড়-শাশুড়ি সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে নাটোর জেলার নারায়নপুর পুকুরপাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নিহত জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানী (৪৫), স্বামী সাব্বির আহামেদ শিপলু ওরফে শিবু (২৩), মেয়ে ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়া (৫০)। সকলেই নরসিংদী চরহাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, `পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না করায় জান্নাতুল ফেরদৌসি ওরফে জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় গত ১৫ জুন শনিবার নিহতের বাবা শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ৬ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, টঙ্গি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিযান পরিচালনা করে।
সেখানে না পেয়ে নাটোর জেলায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার রাতে এজাহারভুক্ত চার আসামি শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানীসহ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে আদালতের অনুমতির প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১ বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তার (১৬) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রুপ বেরিয়ে আসে। স্ত্রী জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ী শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। ফলে জান্নাতির উপর নেমে আসে কঠোর নির্যাতন। যৌতুকের টাকা না দেওয়াসহ মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় শ্বশুর বাড়ির লোকজন। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘটনার ৪ দিন পর ২৫ এপ্রিল নিহতের দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শাশুড়িসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।