নরসিংদীতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছেলে থাকেন অট্টালিকায়। শতবর্ষী বৃদ্ধা মা থাকেন প্রতিবেশীর অন্ধকার ভাঙা ঘরে। এ অবস্থায় ‘অন্ধ মাকে প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে এলেন আ.লীগ সহ-সভাপতি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে টনক নড়ে আওয়ামী লীগ নেতার।
সংবাদ প্রকাশের দুদিনের মাথায় অবশেষে সেই বৃদ্ধা মাকে নিজের অট্টালিকায় তুলে নেন ছেলে ঘোড়াশাল পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কিরণ শিকদার। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ব্যবসায়ী কিরণ শিকদার। তার মা বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমকে গত রমজান মাসে স্ত্রীর কথায় নিজের তিনতলা ভবনে না রেখে পাশের একটি ভাঙা ঘরে ভাড়া বাসায় একা রেখে যান।
সেখানে ওই বৃদ্ধা মা মানবেতর জীবনযাপন করেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি নরসিংদী পুলিশ সুপারের নজরে আসে। তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদের হস্তক্ষেপে বৃদ্ধা মায়ের ছেলেকে পলাশ থানায় ডাকা হয়। এরপর মাকে নিজের কাছে রাখবে বলে অঙ্গীকার করে ছাড়া পান ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে কিরণ শিকদারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির দোতলায় মাকে নিয়ে অবস্থান করছেন কিরণ ও তার পরিবার। সেখানে অনেকটা হাসি-খুশিতে সময় পার করছেন বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম।
দুদিন আগেও বৃদ্ধা মা মাটিতে বিছানা করে ঘুমিয়েছেন। তিনি এখন আলিশান খাটে শুয়ে-বসে সময় পার করছেন। জানতে চাইলে মরিয়ম বেগম বলেন, ছেলের ঘরে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। একা একা আমার কোথাও থাকতে ভালো লাগে না। জীবনের বাকি দিনগুলো ছেলে, নাতি-নাতনি ও পুত্রবধূকে নিয়ে কাটাতে চাই।ছেলে কিরণ শিকদার বলেন, মাকে কাছে পেয়ে আমারও খুব আনন্দ লাগছে। মায়ের যেখানে ভালো লাগবে সেখানেই থাকবেন। যতদিন বেঁচে থাকি নিজের কাছে রেখে মায়ের সেবা-যত করব।
জানা যায়, বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামী প্রায় ২০ বছর আগে মারা যান। বড় ছেলে কিরণ শিকদার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি ঘোড়াশাল পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। পাশাপাশি সাজ ডেকোরেটর নামে একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। পলাশ বাজার এলাকায় নিজের তিনতলা রাজকীয় বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন কিরণ শিকদার।গত রমজান মাসে নতুন বাজার এলাকার গফুর মিয়ার ভাঙা একটি ঘরে বৃদ্ধা মাকে রেখে যান ছেলে কিরণ শিকদার। মাঝে মধ্যে এসে কিছু বাজার সদাই করে দিয়ে যেতেন।
তবে বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমের দেখাশোনা করতেন প্রতিবেশীরা।ওই সময় শতবর্ষী মরিয়ম বেগম বলেন, ছেলের বউ আমাকে তাদের সঙ্গে রাখতে চায় না। তাই আমাকে এখানে রেখে গেছে ছেলে। মাঝে মধ্যে এসে বাজার সদাই করে দিয়ে যায়। তা দিয়েই অন্ধকার ভাঙা ঘরে দিন কাটে আমার। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে অনেক কিছু চাওয়ার থাকলেও এখন কিছুই করার নেই আমার, আজ আমি অসহায়। আমার ইচ্ছা ছিল জীবনের শেষ সময়ে সন্তান, নাতি-নাতনিকে নিয়ে হাসি-খুশিতে দিন কাটাব।