নারান্দী বাজার, নরসিংদীর মনোহরদীর শুকুন্দী ইউনিয়নে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত ছোট্ট একটি বাজারের নাম। বাজারের পশ্চিম পাশে শত বছরের স্মৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে নারান্দী বাজার জামে মসজিদ। ১৯০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি মুসলিমদের নির্মিত অনন্য স্থাপত্য শৈলী বললেও চলে।
এলাকাবাসী জানায়, ১৯০০ সালে প্রথম ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থ তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তখন থেকেই মসজিদটি শুধু শুকুন্দী ইউনিয়ন নয় প্রায় সমগ্র উপজেলার অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদ ছিল। কালের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মসজিদের মুসল্লির সংখ্যা যখন দিন দিন বৃদ্ধি পেতে লাগত এবং নামাজ পড়ার জন্য মুসল্লিদের জায়গার সঙ্কুলান হচ্ছিল না তখন ২০০১ সালে এলাকার মুসল্লিদের অর্থায়নে মসজিদটির দুই পাশ দিয়ে ৪০ ফুট করে মোট ৮০ ফুট বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটি ১২৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থ। তিনটি দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের প্রত্যেক দরজায় রয়েছে চমৎকার কারুকাজ।
মসজিদটিতে মোট সাতটি সারি আছে। প্রায় ৭০০ মুসল্লি এক সাথে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদটির সামনের আঙিনায় সবুজ ঘাসে আবৃত বিস্তৃত একটি মাঠ রয়েছে যেখানে এলাকার মুসল্লিরা দুই ঈদের নামাজ আদায় করে থাকে।
মাঠের ঠিক দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে সুন্দর একটি বকুল গাছ। বকুল ফুল ফোটার সময় ভোরের মৃদুমন্দ বাতাসে বকুল ফুলের সুরভি ছড়িয়ে পড়ে। বকুল গাছের নিচে মসজিদে আগত মুসল্লিদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ইটের ঢালাই দেয়া বেঞ্চ। বেঞ্চে বসে মুসল্লিরা সকাল কিংবা গোধূলিলগ্নে প্রকৃতির নির্মল বাতাস, বর্ষায় ব্রহ্মপুত্র নদের সৌন্দর্য এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। শুকনো মওসুমে নদ যখন শুকিয়ে যায় সম্পূর্ণ ব্রহ্মপুত্র নদের চরে কৃষকরা বিভিন্ন প্রকার ফসল রোপণ করে থাকে। দু’চোখ যতদূর যায় ফসলের বিস্তৃত মাঠ দেখে আর প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেয়ে আগত মুসল্লিদের মন স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করতে আরো ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
মসজিদের প্রবীণ মুসল্লি মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক প্রধান জানান, শতাধিক বছর আগে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির গম্বুজের দুই পাশে ফাটল ধরেছে। ফাটল দিয়ে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পড়ে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটির ছাদের সংস্কার কাজ অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।