স্টাফ রিপোর্টার: প্রথমে প্রেম, তারপর পরিণয়। সেই সূত্র ধরে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে। অতঃপর বিচ্ছেদ। অথচ এসবের কিছুই জানে না ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী।

এরই মধ্যে হঠাৎ এলাকায় গিয়ে কলেজছাত্রীকে স্ত্রী দাবি করে কাগজে-কলমে স্বীকৃত স্বামী। বিষয়টি অস্বীকার করলে কনের বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন কথিত স্বামী। এমনই বিরল ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার পোড়াদিয়া গ্রামে।

বিষয়টি জানার পর কথিত স্বামী ও তার সহযোগীসহ চারজনের বিরুদ্ধে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন কলেজছাত্রী। আদালতের বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে বেলাবো থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি-তদন্ত) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- বেলাবো উপজেলার পোড়াদিয়া গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে ও কথিত স্বামী খাইরুল আলম ওরফে সাব্বির খান, একই উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত করম আলীর ছেলে কাশেম, জাহিদুর রহমান ও মোমেন।

আদালত ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, পোড়াদিয়া কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা কোর্সের চতুর্থ পর্বের ছাত্রী কনা আক্তারের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল আবাসিকের স্থলে বাণিজ্যিক হিসেবে নেয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। তাই বিদ্যুৎ বিল কিছুটা বেশি আসে। বিষয়টি নিয়ে কলেজছাত্রীর বাবা আলাউদ্দিন স্থানীয় খাইরুল আলম ওরফে সাব্বির খানের সঙ্গে আলোচনা করেন। সাব্বির বিলটি সংশোধন করে দেয়ার দায়িত্ব নেন। বিষয়টি সমাধানে দুদিন তার বাড়ি যান সাব্বির।

ওই সময় তার কাছ থেকে বিল সংশোধনের জন্য সাদা কাগজে একটি আবেদনপত্র, কলেজছাত্রী ও তার বাবার দুই কপি করে ছবি নেয়া হয়। কিছুদিন পর কলেজছাত্রী কনা আক্তারের স্বাক্ষর জাল করে নরসিংদী নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে এসে বিয়ে সম্পন্ন করেন সাব্বির। তবে বিয়ের দিন নোটারি পাবলিকে যাননি কলেজছাত্রী। এমনকি বিয়ের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরও করেননি।

পরে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে কলেজছাত্রী বেলাবো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন। নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সমাধানের দায়িত্ব দেন। পরে স্থানীয়ভাবে সালিশ ডাকা হয়। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে নিরূপায় হয়ে মঙ্গলবার নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন কলেজছাত্রী কনা আক্তার।

এ বিষয়ে কলেজছাত্রী কনা আক্তার বলেন, অভিনব কায়দায় আমার বিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেছে সাব্বির। আমাদের মান-মর্যাদা-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিল সংশোধনের কথা বলে সে আমার ও বাবার ছবি নিয়েছে। তারপর আমার স্বাক্ষর জাল করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেছে। এলাকায় সালিশ-দরবার হলে সে আবার স্বাক্ষর জাল করে বিয়ে বিচ্ছেদ করে। কিন্তু আমি এসবের কিছুই জানি না। আমি তার সঙ্গে নোটারি পাবলিকে যাইনি, স্বাক্ষরও দেইনি। বিয়ে তো দূরের কথা তার সঙ্গে এর আগে আমার পরিচয়ও ছিল না। আমার প্রশ্ন হলো, আমার অনুপস্থিতিতে আইনজীবীরা এ অন্যায় কাজে তাকে সহায়তা করল কীভাবে? আমি এর বিচার চাই।

কলেজছাত্রী কনার বাবা আলাউদ্দিন বলেন, সাব্বির আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে। আমি বিদ্যুৎ বিল সংশোধনের জন্য তার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু জাল স্বাক্ষর ও প্রতারণা করে কাগজে-কলমে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে সাব্বির। আমার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে সে। আমি কখনো ভাবতেই পারিনি। উপজেলা কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ দিয়েছি আমি। কিন্তু কোনো বিচার পাইনি। তাই আদালতের দারস্থ হয়েছি।

তবে স্বাক্ষর জাল করে বিয়ে করার অভিযোগ অস্বীকার করে খাইরুল আলম সাব্বির বলেন, কনার সঙ্গে আমার চলাফেরা ছিল। ভালোবাসা ছিল। তারপর আমরা নোটারি পাবলিকে গিয়ে বিয়ে করেছি। পরে সে অন্য কারও পরামর্শে আমাকে ডিভোর্স দেয়। তারা আমার বিরুদ্ধে উপজেলা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়ার পর আমাকে ডাকা হয়েছিল। পরে আমি সব কিছুই খুলে বলেছি। তারপর এখন আদালতে মামলা করেছে তারা। আমি নিঃস্বার্থভাবে তার বাবার বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে দেই। কোনো প্রতারণা করিনি।

এখানে কমেন্ট করুন: