অস্তিত্ব তত্ত্ব ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা: (ইনশাআল্লাহ, বিস্তারিত সামনে থাকছে)
প্রতিটি অস্তিত্বের বিপরীতে একটি সম বিপরীত অস্তিত্ব রয়েছে। Every existence has an equal opposite existence.
এই তত্ত্বের নাম দিয়েছি আমি অস্তিত্ব তত্ত্ব ( Shamim nawaz’s theory of existence.)
এটাকে এক কথায় বলা যায় সব তত্ত্বের গুরু।
প্লাস ওয়ান, তার বিপরীত অস্তিত্ব মাইনাস ওয়ান’কে সাথে নিয়েই জন্ম নেয়। একটি সমান্তরাল ভূমিতে তুমি যতটুকু মাটি নিয়ে একটি উচো টিলা বানাবে, বিপরীতে ঠিক ততটুকু গর্ত বিনির্মাণ হবে।
ভেবে দেখেছ কি? ম্যাটারের বিপরীতে এনার্জি। আছে ধনাত্মক – ঋণাত্মক প্রবাহ। বৃহৎ অস্তিত্ব সম্ভব নয়, যদি ক্ষুদ্র অস্তিত্ব না থাকে। আর অস্তিত্বের বিপরীতে আছে শূন্যতা। ঠিক যতটুকু অস্তিত্ব, ঠিক ততটুকু শূন্যতাকে গ্রাস করেই সে তার অস্তিত্বকে জানান দেয়।
এই মহাবিশ্বে যেমনি আছে গ্রেভিটেশন এনার্জি, তার বিপরীতে আছে সম্প্রসারণ এনার্জি।
আলো – অন্ধকার
চিন্তা – কর্ম
সৎ – অসৎ
দৃশ্য – অদৃশ্য
চেতন – অবচেতন
জন্ম – মৃত্যু
নশ্বর – অবিনশ্বর
পুরুষ – নারী
অস্তিত্ব – শূণ্যতা
স্রষ্টা – সৃষ্টি ।
এছাড়াও বাস্তবসম্মত প্রমাণিত অগণিত উদাহরণ দেয়া যায়।
অনাদি অনন্ত চিরস্থায়ী চিরঞ্জীব সেই মহান স্রষ্টা-ই শূন্য থেকে সৃষ্টি জগতের অস্তিত্ব বিনির্মাণ করেছেন। এই তত্ত্ব যারা জানেনা, যারা বোঝে না, তারাই এই সৃষ্টি জগতের বাইরে ও ভেতরে শুধু শূন্যতাকে খুঁজে পায়।
স্রষ্টা আছেন বলেই সৃষ্টি হয়েছে। তিনি যেহেতু এক ও অদ্বিতীয়, তাই তিনি তাঁর সৃষ্টি জগতের সবকিছু তৈরি করেছেন বিপরীতমুখী জোড়ায় জোড়ায়। আর তাতে দিয়েছেন দারুন এক ভারসাম্য। হ্যাঁ তিনিই সেই পবিত্র সত্তা, যিনি একমাত্র উপাস্য; অর্থাৎ উপাসনা বা ইবাদতের যোগ্য।
তিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, তিনি অনাদি অনন্ত অসীম, যার শুরু নেই – শেষ নেই। সেই পরম সত্তার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য অসীম, কারণ তিনি নিজেই অসীমত্বের অধিকারী।
তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য অসীম জ্ঞানের অধিকারী। তিনি অসীম বিজ্ঞানময়তার অধিকারী, তিনি অসীম পরিকল্পনা, অসীম বাস্তবায়ন, অসীম রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারী।
এবার আপাতত উপসংহারে আসি:-
বলা যায়, এই দৃশ্য জগতের অস্তিত্ব আছে, সুতরাং তার বিপরীতে একটা অদৃশ্য জগত বা ভিন্ন ডাইমেনশনে আরেকটি ইউনিভার্স নিয়েই সে জন্ম নিয়েছে।
এই জগত, ম্যাটার ও এনার্জির সমন্বয়ে তৈরী; তাই সেই অন্য জগৎ এন্টিম্যাটার ও এন্টি এনার্জির সমন্বয়ে হওয়াটাই যৌক্তিক।
এই ইউনিভার্সে ব্ল্যাক হোল আছে সুতরাং হোয়াইট হোল থাকবেই। সেটা হতে পারে এই ইউনিভার্সে কিংবা ভিন্ন ডাইমেনশনে বা অন্য কোন ইউনিভার্সে। ব্ল্যাকহোলের ধর্ম যদি হয় সব কিছুকে গ্রাস করা, তাহলে হোয়াইট হোল এর ধর্ম হবে সবকিছুকে উদগীরণ করা।
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন ইউনিভার্সের পুরোটা জুড়ে প্রায় ৯০% ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি রয়েছে। এই ইউনিভার্সে আলোর চেয়ে মৌলিকত্ব হচ্ছে অন্ধকার। সুতরাং আমার এই অস্তিত্ব তত্ত্বের সূত্র মতে, তার বিপরীতে হোয়াইট ম্যাটার ও হোয়াইট এনার্জি আছেই। সেটা হয়তো অন্য কোন ইউনিভার্সে কিংবা অন্য ডাইমেনশনে এবং সেই হোয়াইট ম্যাটার ও হোয়াইট এনার্জির বলে সেখানে আলো-ই হবে মৌলিকত্ব। অর্থাৎ সে হোয়াইট ম্যাটার ও হোয়াইট এনার্জি সম্বলিত সেই আলোময় জগতে আলো তৈরীর জন্য কোন সূর্য নক্ষত্রের প্রয়োজন হবে না।
এমনিভাবে বলা যায়, এই অস্থায়ী নশ্বর জগত আছে, সুতরাং তার বিপরীতে কোথাও ভিন্ন ডাইমেনশনে অথবা এই ইউনিভার্সের বাইরে কোনো এক চিরস্থায়ী জগত আছে। ঘূর্ণায়মান এই নশ্বর জগতে সময় এর অস্তিত্ব আছে সুতরাং তার বিপরীতে, সময়ের অস্তিত্ববিহীন ইউনিভার্স থাকতেই হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে ম্যাটার ধ্বংস হয় না, এনার্জি ধ্বংস হয় না; তাহলে আমার স্বকীয় জীবন কেন ধ্বংস হবে (যারা মনে করে)? আমার জীবন কেন বিলীন হবে? বরং বলা যায়, আমার এই অস্থায়ী ক্ষুদ্র জীবনের বিপরীতে আমার একটা চিরস্থায়ী জীবন থাকবেই। আর সেক্ষেত্রে মৃত্যুটা হচ্ছে উভয়ের মধ্যে ভারসাম্যমূলক অবস্থা।
আর কে না জানে, প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীত ও সমান প্রতিক্রিয়া আছে, সুতরাং এই ক্ষুদ্র জীবনের সৎ চিন্তা – অসৎ চিন্তা, সৎকর্ম – অসৎকর্মের প্রতিফলই আমরা আমাদের সেই অনন্ত জীবনে প্রতিফল পাবো। আর এটাই মহান স্রষ্টার অমোঘ বিধান।
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’আলার, যিনি অসীম জ্ঞানের অধিকারী; শুকরানাল্লাহ, তিনি আমাকে এই উপলব্ধি দান করেছেন।
ইহকাল ও পরকালের জ্ঞান ছাড়া কোন জ্ঞান পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান নয়। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ব্যতীত কোনো কল্যাণ পূর্ণাঙ্গ কল্যাণ নয়। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ও আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের উত্তম জ্ঞান ও উত্তম কল্যাণ দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
(আরও অনেক বিষয় আছে, আরও অনেক কথা আছে। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ যদি আমাকে তৌফিক দান করেন, পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।)
#theory_of_existence_by_shamim_nawaz
শামীম নেওয়াজ
লেখক ও গবেষক
ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান ও ইসলাম