অনিয়মই এখানে নিয়ম। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। দলিল রেজিষ্ট্রি থেকে শুরু করে সব জায়গায় দিতে হয় মাত্রাতিরিক্ত টাকা। নিয়ম না থাকলেও প্রতি রবি ও সোমবার সকাল ১০ টার পর থেকেই গ্রামের জমির দলিলের জন্য ৩% এবং শহরের জমির দলিল সম্পাদন করার জন্য কতিপয় (জমি ক্রয়কৃত ব্যক্তিবৃন্দ) দলিল গ্রহিতাদের কাছ থেকে ২% ঘুষের টাকা আদায় করা হচ্ছে। একটি সাব-কাবলা দলিল রেজিষ্ট্রি করতে প্রতি লাখে স্ট্যাম্প ৩%, রেজিষ্ট্রি ২%, ট্যাক্স ৩%, স্থানীয় সরকার ৩% হারে সরকারিভাবে আদায় করার কথা থাকলেও কার্যকর হচ্ছে না মনোহরদী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে। সাব-কাবলা দলিলকে দানপত্র দলিল দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা, আর সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব।
এভাবে মনোহরদী সাব-রেজিষ্টি অফিসের অফিস সহকারী জয়নাল আবেদিন ও পিয়ন মাহবুব প্রতিমাসে অবৈধভাবে আয় করছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়াও মনোহরদী সাব-রেজিষ্টি অফিসে নকল নবিস হিসেবে ৩০-৩৫ জন প্রতিদিন কাজ করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। বর্তমান মানোহরদী সাব-রেজিষ্টার মনিরুজ্জামান গত ৫ মাস পূর্বে মনোহরদী সাব-রেজিষ্টি অফিসে যোগদান করেন। তিনি মনোহরদী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ও গাজীপুর সাবরেজিষ্টি অফিসে দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন। সাব রেজিষ্টারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোকবল কম থাকায় ২ জেলায় সাবরেজিষ্টার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিন অফিস করা সম্ভব হচ্ছে না।’ মনোহরদী সাব-রেজিষ্টি অফিসে সপ্তাহে ২ দিন অফিস করার কথা জানান তিনি।
দলিল লেখকরা জানায়, ‘সাব-রেজিষ্টার কোন মাসে ১ দিন আবার কোন সপ্তাহে ১ দিন ইচ্ছামাফিক অফিসে আসেন। আমাদের কথা আমলেই নিচ্ছেন না তিনি। যার ফলে দিনের পর দিন ক্রেতা গ্রহিতারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আবার প্রতি দলিল মাফিক অফিসিয়াল ২-৩% অতিরিক্ত টাকা না দিলে দলিল রেজিষ্ট্রি করছেন না তারা।’
ক্রেতা-গ্রহিতারা জানায়, ‘মনোহরদী সাব-রেজিষ্টি অফিস যেখানে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না। সাব-কাবলা দলিলের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১১% এর কথা স্বীকার করলেও দাতা গ্রহিতাদের নিকট থেকে ১৪-১৫% হাতিয়ে নিচ্ছে। দাতা গ্রহিতাদের টাকা বাচানোর কথা বলে সাব কাউলা দলিলকে দানপত্র দলিল হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে দলিল লিখক ও কর্মকর্তারা। এছাড়া দলিলের শ্রেণী পরিবর্তন ভিটিকে নাল, নালকে ঢোবা, ঢোবাকে জলাশয়ে পরিবর্তন করে দাতা গ্রহিতাদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।’
সাব-রেজিষ্টারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হন নি। সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস সহকারী জয়নালের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাব-কাবলা দলিল রেজিষ্ট্রি করলে প্রতি লাখে ১১% ও দানপত্র দলিল করলে প্রতি লাখে ৮% হারে টাকা দিতে হবে।
দলিল লিখক সমিতির সভাপতি আবুল কালামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাব-কাবলা দলিলের ক্ষেত্রে ১৩% ও দানপত্র দলিলের ক্ষেত্রে ১১% হারে টাকা দিতে হবে।’ এছাড়া সাবকাবলা দলিলের চেয়ে দানপত্র দলিল অনেক ভালো বলে জানান তিনি। এভাবেই দলিল লিখক, অফিস সহকারী ও সাব-রেজিষ্টার যৌথভাবে দলিল গ্রহিতাগনের নিকট থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন।