নরসিংদীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত ‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতেও চাহিদা বাড়ছে। ‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ার ফলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে অধিক আগ্রহী হয়ে পড়েছেন নরসিংদী শিবপুরের লেবু চাষীরা।

নরসিংদী কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ লতাফত হোসেন জেলার লেবু চাষীদের ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১০ বছর পূর্বে নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করে নরসিংদী শিবপুরের মাটি লেবু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে বিবেচিত হয়। এরই ফলশ্রুতিতে প্রাথমিকভাবে জেলার শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আগ্রহী লেবু চাষীদের মাধ্যমে চাষাবাদ প্রক্রিয়া শুরু করেন। আবাদকৃত চাষীদের ‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু চাষে ব্যাপক সফলতা ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ায় উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও এ জাতের লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। ‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু’র ব্যাপক চাষাবাদে উৎপাদিত পণ্য দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতেও বাণিজ্যিকভাবে চাহিদা পূরণে সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি গোটা-জনগোষ্ঠীর দারিদ্রতা বিমোচনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। পরবর্তী সময়ে জেলার ৫টি উপজেলায় লেবু চাষের কর্মসূচি গ্রহণ করেন কৃষি বিভাগ। বর্তমানে নরসিংদী’র বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত লেবুর মোট ৭০ শতাংশই বহির্বিশ্বে রফতানি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জেলার শিবপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৪শত হেক্টর জমিতে সাড়ে ১২শত বাগানে ‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু’র চাষাবাদ হচ্ছে।

অতি সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনকালে শিবপুর উপজেলার ধানুয়া এলাকার লেবু চাষী শাহ আলম খান জানান, সখের বসবর্তি হয়ে ৫/৭ বছর পূর্বে বাড়ির আঙ্গিনায় ১০/১২ টি ‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু’র চারা বপন করেছিলাম। এক বছর যেতে না যেতেই বপনকৃত ‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু’র গাছগুলোতে প্রচুর পরিমানে লেবুর ফলন হয়। সন্ধান পেয়ে স্থানীয় একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী ২ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার বাগানের সকল লেবু ক্রয়ের ফলে আমি অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক বলে লেবু চাষে আমার ব্যাপক আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে আমার বাগানটিকে বানিজ্যিকভাবে সম্প্রসারিত করণে আমি ৪ বিঘা জমিতে লেবু’র চাষাবাদ করে আসছি এবং বাগানের উৎপাদিত লেবু স্থানীয় বাজারসহ দেশ-বিদেশের বাজারে রপ্তানী হচ্ছে। নিয়মিত লেবু বাগানের দেখাশোনার পাশাপাশি পরিচর্যা করার জন্য আমিসহ একজন কাজের লোক রয়েছে।

অপরদিকে, শিবপুরের মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও ভিটিপাড়া এলাকার লেবুচাষী খন্দকার মাহবুবুর রহমান জানান, ২০০৩ সালে লেখাপড়া শেষে কোন চাকরি-বাকরী না পেয়ে এক আত্মীয়ের পরামর্শে লেবু চাষাবাদ শুরু করি। চাষাবাদের মাস ছয়েক পরেই ঢাকা থেকে এক ব্যবসায়ী এসে আমার বাগান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লেবু ক্রয়ের ফলে দেড় লাখ টাকা পাওয়ায় অপ্রত্যাশিত লাভ হয়। বর্তমানে ৫ বিঘা জমিতে আমার ৪টি বাগান রয়েছে,এতে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ টাকার অধিক লেবু বিক্রি করার পরও ২ থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশাকরি।

এ বিষয়ে শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল কবির জানান, বর্তমানে সৌদি আরব, কানাডাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে কলম্বো লেবু রপ্তানী হচ্ছে। বিষমুক্ত হওয়ায় বিদেশীরা এখানকার লেবু ক্রয় করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলন ও বাজার দর ভাল হওয়ায় এই কলম্বো লেবুর চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

‘কলম্বো’ জাতের সুগন্ধি লেবু’র চাষাবাদে শুধু পানি আর কিছু কীটনাশক ছাড়া তেমন কোন বাড়তি উপকরণ ব্যবহার করতে হয়না। লেবু বাগানের গাছের পাতা শুকিয়ে মাটিতে পড়লে তা চাষীরা জমিতে কিছু পানি দিয়ে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করে। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে, কম পরিশ্রমে বেশী লাভ অন্য কোন ফসলের চাষাবাদে হয়না বিধায় নরসিংদী’র কৃষকরা লেবু চাষে অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করছে।

এখানে কমেন্ট করুন: