নরসিংদীর বেলাবতে পরীক্ষার হলে প্রকাশ্যে শিক্ষক কর্তৃক মাথার চুল কেটে নেয়ার লজ্জায় আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বিজয় মিয়া নামে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী। গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের লাখপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ চুল কাটার ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কাজলের বিরুদ্ধে চুল কাটার অভিযোগ উঠেছে।

ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। শিক্ষার্থী বিজয় মিয়া উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের পাহাড় উজিলাব এলাকার আবু তাহেরের ছেলে।

শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার সকালে শিক্ষার্থী বিজয় দশম শ্রেণীর প্রথম সেমিষ্টার পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পরই পরিদর্শনে এসে কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কাজল। ওই সময় তিনি শিক্ষার্থী বিজয়ের মাথার চুল কাটার ধরণ (স্টাইল) পছন্দ না হওয়ায় অফিস কক্ষ থেকে কাঁচি এনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সামনে এলোপাথারিভাবে মাথার চুল কেটে দেন। আকষ্মিক প্রধান শিক্ষকের এরকম কাণ্ডে হতভম্ব হয়ে পড়ে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

এঘটনায় পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে শিক্ষার্থী বিজয় লজ্জায় ও অপমানে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়লে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজয়ের জ্ঞান না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাঁকে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এসময় চিকিৎসকরা তাঁর চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ার আলামত পান। সে বর্তমানে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বিজয়ের পিতা আবু তাহের বলেন, আমার ছেলে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এ স্কুলে লেখাপড়া করে। তার রোল নাম্বার ৫। কোনদিন তার বিরুদ্ধে কোন খারাপ কাজের অভিযোগ পাইনি। আমার ছেলের মাথার চুল প্রধান শিক্ষকের পছন্দ না হলে তিনি তাকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা পারতেন। আমাদেরকেও অফিসে ডেকে জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে ছাত্রছাত্রীদের সামনে বিজয়ের মাথার চুল কেটে দেন। এতে সে লজ্জা ও অপমানে কিছু একটা খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনায় বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া সাহেব আমাদের থানায় ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আপোষ করিয়ে দেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কাজল একজন বদমেজাজি। তিনি নিজেই মাথার চুল কান পর্যন্ত রাখেন। ওই শিক্ষার্থী কী দোষ করল?

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কাজলকে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিদ্যালয়ে না পেয়ে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে অন্যান্য শিক্ষকরাও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রকাশ্যে সকল শিক্ষার্থীর সামনে চুল কেটে নেওয়া রীতিমত নির্যাতন। একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না। এ ব্যাপারে কেউ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে শুনেছি ওসি সাহেব প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের লোকজনকে আপোষ করিয়ে দিয়েছেন। আসলে এধরনের ঘটনা মীমাংসা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানার ওসির সমন্বয়ে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, এটাকে আসলে আপোষ বলা যাবে না। ঘটনাটি শুনে আমি ওই শিক্ষার্থীর বাবা মা ও ওই প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কারণ প্রধান শিক্ষক যা করেছেন তা অন্যায়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর বাবা মা কোন অভিযোগ দিতে চাননি বিধায় আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর মনে হয় ওই শিক্ষকই অভিভাবকদের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন।

এখানে কমেন্ট করুন: