নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:
নরসিংদী সদর উপজেলায় ৭০ টি কারখানার বর্জ্য ফেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ দূষিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০টি কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এসব কারখানার তরল বর্জ্য এবং অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তুপ জমে নদটির স্বাভাবিক পানির প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বর্জ্য আর আবর্জনার কারণে পানি কালো রং ধারণ করেছে।

দূষিত পানির দুর্গন্ধ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।পরিবেশ অধিদপ্তরের নরসিংদী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৭০টি ডাইং কারখানা। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে ৪৫টি কারখানা তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) তৈরি করেছে। বাকি পাঁচটির ইটিপি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, কারখানাগুলোতে ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়।

এ ছাড়া বেশ কিছু কারখানার ইটিপি যন্ত্র প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না; ফলে অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলায় নদটির পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদীর কর্মকর্তা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র নদে তরল বর্জ্য ফেলা শিল্পকারখানাগুলোর মধ্যে ৪০ টি কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।

কারখানাগুলো হচ্ছে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুঁড়েরপার এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল, সাহেপ্রতাবের মহারানী ডাইং, অপরূপা প্রিন্টিং, শেখের চরের মেসার্স হাবিব টেক্সটাইল, নিউ বিসমিল্লাহ ডাইং, বিসমিল্লাহ ডাইং, রকিব ডাইং, শাহী ডাইং, ছোট গদাইচর এলাকার গোল্ডেন ডাইং, বিরামপুর এলাকার ব্রাইট টেক্সটাইল, আলী ফেব্রিকস, মেসার্স প্রসেসার্স লিমিটেড, দেওয়ান টেক্সটাইল, সাটিরপাড়া এলাকার হোসেন ক্যালেন্ডারিং এবং শালিধা এলাকার মাহমুদা টেক্সটাইল,বিএল ডাইং,রাব্বি ডাইং শাজেদা ডাইং,মুত্তাদিন ডাইং,ডি এন টেক ্রটাইল,আলী ডাইংআহমেদ ডাইং,ইউনিফিল টেক ্রটাইল,ফেত সাইজিং,এন আহম্মদ ডাইংডি এন ট্রেক ্রটাইল,ইউনিটি ডাইং,রাব্বি সাইজিং,হক সাইজিং,পাকিজা ডাইং,গ্রাফিক ্র প্রিন্ট এন্ড প্যাক,সানপাওয়ার ট্রেক ্র টাইল,কুমিল্লা ডাইং,কালিবাড়ী ডাইং,কল্যানি ডাইং,আন আরফা সাইজিং,তানিয়া প্রিন্টিং,এইচ এম ডাইং,ইবা ডাইং, ফাতেমা ডাইং,মাধবদী ডাইং,সাইজিং ইন্টা,মাহমুদা প্রিন্টিং ওডাইং,।

সম্প্রতি সরেজমিনে সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ঘুরে দেখা গেছে, নদটি নরসিংদীর ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বহমান। এর মধ্যে সদর উপজেলার পাঁচদোনা-শেখেরচর এলাকার ১০ কিলোমিটার অংশে নদের উভয় পাশের তীরঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে শিল্পকারখানা। আর এসব কারখানার বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলা হচ্ছে। এই বিষাক্ত বর্জ্য ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদ হয়ে মেঘনায় গিয়ে মিশছে। নরসিংদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘খরচ কমাতে কোনো কোনো কারখানা দিনে ইটিপি চালু রাখলেও রাতে বন্ধ রাখে—এমন অভিযোগ আমিও পেয়েছি। ছাড়পত্র নেই এমন বেশ কয়েকটি কারখানা ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করে রেখেছে। কিন্তু তারা ছাড়পত্র পাচ্ছে না।পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, ‘ইটিপি চালু করা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযানে যাই। কিন্তু ততক্ষণে কারখানা কর্তৃপক্ষ ইটিপি চালু করে ফেলে। নাগরিক আওয়াজের সাধারন সম্পাদক খ ম কামরুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘দূষণ বন্ধে গণসচেতনার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহ মানব বন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

এখানে কমেন্ট করুন: