শেখ মানিক, শিবপুর প্রতিনিধি: নারী কেলেংকারিতে জড়িয়ে পড়া নরসিংদীর শিবপুর মডেল থানার এ এস আই সুমন মিয়াকে পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ইতিপূর্বে পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী, গ্রেফতার বাণিজ্য, ব্ল্যাকমেইলিং সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তাকে শিবপুর মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করে নরসিংদী পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। নারী কেলেংকারির নিয়ে নিউজ সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে এএসআই সুমনকে নিয়ে নরসিংদীতে সমালোচনার ঝড় উঠে।
সুমনের বর্তমান স্ত্রী আছমা তার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার ও পুলিশ পরিদর্শক ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এ অভিযোগ করেন যে সুমনের সাথে ফোনে আলাপচারিতায় তার সঙ্গে গভীর ভালবাসার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গত ৭/৯/২০১৭ইং তারিখে তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে নরসিংদী বিজ্ঞ নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের কিছু দিন পর কোন কারণ ছাড়াই তার স্ত্রীকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি এবং খারাপ ব্যবহার করে আসছিলো। কথায় কথায় ডিভোর্সের হুমকি প্রদান করতো। এমনকি আমাকে সে শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন করত।
সুমনের স্ত্রী নিউজ সময়কে জানায়, সুমন একজন নারী লোভী। বিয়ের পর জানতে পারলাম সে আমাকে ছাড়াও শিবপুরে মিতু, মনোহরদীতে মুক্তা, কাপাসিয়া থানার মহিলা পুলিশ সহ এ পর্যন্ত সে ৭/৮ জন বিবাহিত ও অবিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করে পুলিশের ক্ষমতার জোরে এবং বিভিন্ন রাজনীতিক দলের নেতাদেরকে ম্যানেজ করে ছাড়া ছাড়ি করে। আমি বর্তমানে তার স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও গত কিছু দিন পূর্বে শিবপুরের ধানুয়া গ্রামে গভীর রাতে গোপনে তার মা ও বোনকে নিয়ে রোকেয়া নামের এক মেয়েকে বিয়ে করতে আসলে আমি ঐ বাড়ীতে উপস্থিত হলে তার মা ও বোন আমাকে দেখেই পালিয়ে যায়। সে আমাকে শিবপুরের ক্ষমতাসীন দলের বহু নেতাদেরকে দিয়ে মোটা অংকের টাকার প্রস্তাব দিয়ে আসছে আমি যেন তাকে ছেড়ে চলে যাই এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেই। আসমা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন আমি তার ভালবাসার জন্য আমার জীবনের সবকিছু ছেড়ে তাকে বিয়ে করছি সুখে শান্তিতে সংসার করতে। আর সে আমাকে দুখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। সে আমাকে ছেড়ে গেলেও আমি তাকে ছাড়ব না। আসমা আরও জানান গত ২২ অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখে নরসিংদী পুলিশ সুপারের নিকট একটি অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করে নি। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এ অভিযোগ করছি।
সুমনের বিরুদ্ধে ব্যপক গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও শিবপুরের মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে । রাস্তায় বিভিন্ন সময় পথচারীদেরকে তল্লাসি করে কিছু পায় আর না পায় তাদেরকে মাদক দিয়ে হয়রানীর হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করে নেয়। আর অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে মাদক দিয়ে অথবা অন্য মামলা দিয়ে অন্যায় ভাবে হয়রানি করে আসছে সে।
গত ২৬ জুলাই দুলালপুরের রঙ্গণ পিতা আবদুল হাই চৌঘরিয়া থেকে তল্লাসী করে কোন কিছু না পেয়েও থানায় নিয়ে আসে পরে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে জানা যায়। উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের মাদক বিক্রেতা আসাদ ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে মাসিক মাসোহারা নিচ্ছে বলে জানা যায়।
গত ৭ জুলাই দুলালপুর শিমুলতলা দড়িপাড়া গ্রামের আবু হায়েত (রাজ মেস্ত্রী) কাজ শেষে বাড়ী ফিরার পথে বাড়ী সংলগ্ন আসলে সুমন তাকে তল্লাসী করার জন্য পথ রোধ করে অন্ধকারের দিকে জোড় করে নিয়ে যায়। তখন তাকে মাদক দেওয়ার চেষ্টা করলে তার ডাকচিৎকারে আশ পাশের লোকজন আগাইয়া আসলে এ এস আই সুমন ঘটনা স্থল ত্যাগ করে। পরের দিন স্থানীয় সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করে গণস্বাক্ষর করেন এলাকাবাসী । এ বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল মাষ্টার ও বাতেন ভূইয়ার সহযোগীতায় আবু হায়েতের মুখ বন্ধ করেন সু চতুর সুমন মিয়া।
গত ১৬ জুলাই উপজেলার সদর থেকে বাহারদিয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন এর ছেলে পারভেছ হোসেন পাখিকে ২০ পিস ইয়াবা সহ আটক করার পর ২০ হাজার টাকায় বিনীময়ে মাদক মামলা না দিয়ে জামিন যোগ্য ৩৪ ধারায় চালান করেন। ৩০/০৫/১৭ইং তারিখে উপজেলার মজলিপুর গ্রামের জালুর ছেলে জিসানকে ইয়াবাসহ উপজেলার শিমুলতালা এলাকা থেকে আটক করে ৪০হাজার টাকা বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ২১/৮/১৭ ইং তারিখে উপজেলার মির্জাকান্দি গ্রামের গাজা ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া কে ৮ পুইরা গাজাসহ আটক করে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে।
গত ১৪ ফ্রেরুয়ারী উপজেলার আশুতিয়া গ্রামের নিবুশার ছেলে মাদক ব্যবসায়ী রতন মিয়া ও তার সহযোগী আলামিন কে আটক করে থানায় না নিয়া থানা সংলগ্ন সুমনের বাসায় নিয়ে গিয়ে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছিল বলে জানা যায়। পরে বিষয়টি সাংবাদিকরা ওসি মহোদয়েকে অবগত করলে উক্ত আসামীদেরকে পরের দিন থানায় আনতে বাধ্য হয়। সূত্র মতে আরও জানা যায় যে তার থাকার রুমে ট্রাং এর ভিতরে জমানো ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা নাই হয়ে য়ায় যা পরের দিন সম্পূর্ণ টাকা ট্রাং এর মধ্যে পাওয়াও গেছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি, অনিয়ম ও নারী কেলেংকারির কোন প্রকার সংবাদ পত্রপত্রিকায় প্রচার না করার জন্য স্থানীয় কিছু সাংবাদিকদের মোটা অংকের উৎকোচ দিয়েছেন বলেও জানা যায়।
শিবপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন এ এস আই সুমন কে নরসিংদী পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে আর স্ত্রীর অভিযোগের তদন্ত চলছে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।