বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ১০ বছর করার প্রস্তাবকে নাকচ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ৫ই জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনে এক জরুরী বৈঠকে সরকারের সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান এই প্রস্তাব উত্থাপন করে দাবি করেন, সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচিত সরকার ও সংসদের মেয়াদ ৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর করা হোক। তবে সংসদের মেয়াদ ৫ বছরই থাকবে বলে উল্লেখ করে তা নাকোচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে আসন্ন বিভাগীয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণ যাকে পছন্দ করে ভোট দেবেন, সেই নির্বাচিত হবেন। জনগনের ভোটাধিকারে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা বা অধিকার কারও নেই। এই নির্বাচনের জয় পরাজয়ে সরকার পরিবর্তন হবে না। তাই এসব নির্বাচনে দলের কোনো দুর্নাম যেন না হয়, বিরোধী পক্ষ যেন এ নির্বাচন নিয়ে কোনো ইস্যু তৈরি করতে না পারে সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে তাদেরও তো অংশগ্রহণ রয়েছে।
আগামী রোববার (৮ জুলাই) সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধন বিল পাস হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এ তথ্য জানান। বৈঠকে সংসদ সদস্যদের সংবিধান সংশোধনীর ভোটিং প্রক্রিয়া সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত আলোচনা করেন বলে জানা গেছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের বিধি আরও ২৫ বছর বাড়িয়ে গত ৮ এপ্রিল ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮’ সংসদে উত্থাপন করা হয়। পরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে বিলটি পাসের সুপারিশ করে রিপোর্ট উত্থাপন করা হয় ৬ জুন।
বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান নারী আসনের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে সপ্তদশ সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হলে পরবর্তী সংসদ থেকে তার মেয়াদ ২৫ বছর হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিদের এলাকায় গিয়ে খবরদারি না করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক নারী সংসদ সদস্য তার নিজের এলাকা বা তার জন্য নির্ধরিত নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে খবরদারি করেন। এ তথ্য আমার কাছে এসেছে। এ ধরনের খবর আমি আর শুনতে চাই না। কেউ এলাকায় গিয়ে খবরদারি করবেন না।
তিনি বলেন, অনেক এলাকায় সংসদ সদস্য ও যারা নতুন করে মনোনয়ন চাচ্ছেন তারাও একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এই ধরনের ঘটনা দ্বিতীয়বার শুনতে চাই না। যিনি এমপি তারও এলাকায় গিয়ে কথা বলার অধিকার রয়েছে। যিনি মনোনয়ন চান তারও সেই অধিকার আছে। পরস্পরের মধ্যে দোষারোপ না করে সবাইকে জনগণের দুয়ারে যেতে হবে। সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে ভোট চাইতে হবে। তৃণমুলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, যারা এখন সংসদ সদস্য আছেন তারাই যে মনোনয়ন পাবেন বিষয়টি তা নয়। অনেকে বাদ পড়বেন। নতুন অনেকে মনোনয়ন পাবেন। আমরা জনপ্রিয়তা দেখে নমিনেশন দেবো। তবে যাকে নমিনেশন দেবো তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। এতে সকল রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে সেইভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।