মো.শফিকুল ইসলাম(মতি)নরসিংদী:নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একশ্রেণির দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সাব-রেজিস্ট্রার সুর্বা রানী দাস নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা,দানপত্র দলিল রেজিষ্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।ইতি পূবে দলিল গ্রহিতা জামাল পুর গ্রামের মোস্তফা কামাল বলেন আমি কিছুদিন পূর্বে একটি জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য মনোহরদী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল কালামের কাছে যাই, তিনি বলেন সাফ কাবলা দলিল করলে বেশি খরচ হবে। পরে দলিল লেখে জমাদেয়।
লোকটির কাছে সরকারী ফিসের বাহিরে মোটা অংকের অতিরিক্ত টাকা দাবী করে তিনি বলেন আমি টাকা দিবনা আমি সাংবাদিকদের জানাব এই কথাবলার পর রেগেজান সভাপতি ও সাবরেজিস্টার, কিছুতেই দলিল রেজিস্ট্রি করবেনা, দলিলে অনেক সমস্যা আছে বলে দলিল রেজিস্ট্রি না করে দলিলটি ফেরত দেন তিনি। পরে বিকালে সভাপতি লোকটিকে বলেন, আপনার অতিরিক্ত টাকা দিতে হবেনা, দলিলটি দান পত্র করেদেই টাকা কম লাগবে লোকটিকে বুঝিয়ে রাজি করান। জামাল পুর মৌজা ৩.৫০ শতাংশ জমি দান পত্র দলিলের মুল্য দেখানো হলো ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা, নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক জানান, দানপত্র দলিল করতে হলে স্ট্যাম্প ১.৫০%, রেজিস্টি ফি ১%,সাবরেজিস্টারকে ৩% মোট ৫.৫০% সাড়ে পাঁচ পারসেন্ট জমা করতে হয়।
তাহলে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার দলিল করতে হলে ৮ হাজার ৯শত ২৫ টাকা লাগার কথা। কিন্তু এর স্থলে সভাপতি লোকটির নিকট হতে অফিসের সেরেস্তা খরচ সহ বিভিন্ন ভাওচার দেখিয়ে লোকটির নিকট হতে ১৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ৮৯২৫(আট হাজার নয়শত পঁচিশ) টাকার স্থলেই অতিরিক্ত আরো ৮০৫৭ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সভাপতি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবরেজিস্টার ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কথাবলতে রাজি হয়নি। মনোহরদী সাবরেজিস্টার অফিসে তিনি ১৪ মাস যাবৎ কর্মরত আছেন,যোগদানের পর থেকে এ দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল থেকে তিন থেকে চার হাজার টাকা শেরেস্তার নামে জনগনকে জিম্মি করে জনগনের ঘামজরানোর এসব অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। জনগনের নিকট হতে আদায় কৃত অতিরিক্ত এ টাকা দলিল লেখক সমিতি, মসজিদ ও বিভিন্ন জাতীয় দিবসের চাঁদা ছাড়া বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে।প্রতি বছর ৪/৫ হাজার দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলিল হেবাবিল এওয়াজ, আমমোক্তার নামা ও দানপত্র ও ঘোষণাপত্র দলিল।
এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের রেজিস্ট্রি করা দলিল পরীক্ষা করলে এর সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করেন অনেকেই। সোমবার(১২ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। তার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, শেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়।
তবে কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রত্যেক দলিল থেকে শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও সিন্ডিকেটের ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, অফিসে কোনো শেরেস্তা আদায় করা হয় না। দলিল লেখকরা চুক্তি করে কিছু টাকা অতিরিক্ত নিতে পারে।এ বিষয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সুর্বা রানী দাস জানান, অফিসে কোনো সিন্ডিকেট নেই। দলিল লেখকের মাধ্যমে আমার নিকট দলিল আসে। শেরেস্তা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, অফিসে কোনো শেরেস্তা আদায় করা হয় না। দলিল লেখকরা চুক্তি করে দলিল রেজিস্ট্রি সরকারি মূল্যের বেশি টাকা নিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অফিসের বিবিধ খরচ বাবদ সামান্য টাকা রাখা হয় বলে তিনি স্বীকার করেছেন। তবে কারোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে নয়।